প্রথম পর্ব : আলিগড় আন্দোলন, মুসলিম লিগের জন্ম, হিন্দু মহাসভা
🔹 দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায়ের প্রথম পর্ব : 'আলিগড় আন্দোলন, মুসলিম লিগের জন্ম, হিন্দু মহাসভা 'থেকে কিছু প্রশ্ন উত্তর :
[প্রতিটি প্রশ্নের মান : 3/4]1. জাতীয়তাবাদ' বলতে কী বোঝ ?
অথবা,
টীকা লেখো : জাতীয়তাবাদ।
উত্তর : ভূমিকা : 'জাতীয়তাবাদ' একটি রাজনৈতিক মতবাদ বা আদর্শ। রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের আলোচনায় এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। ইউরোপে অষ্টাদশ শতাব্দীতে জাতীয়তাবাদের ধারণা প্রথম গড়ে ওঠে। সি. লয়েড বলেছেন - "আধুনিক বিশ্বের ধর্ম হল জাতীয়তাবাদ।"
জাতীয়তাবাদ :
1. অর্থ ও সংজ্ঞা : ‘জাতীয়তাবাদ’ (Nationalism) শব্দটি এসেছে ‘জাতি’ (Nation) শব্দ থেকে। সহজভাবে বলতে গেলে, জাতীয়তাবাদ হল কোনো জাতি বা জনগোষ্ঠীর মধ্যে গভীর ঐক্যবোধ ও স্বাতন্ত্র্যবোধের প্রকাশ। নিজের জাতির প্রতি ভালোবাসা ও ঐক্যের অনুভূতি থেকেই জাতীয়তাবাদের জন্ম। ইতালির ঐক্য আন্দোলনের নেতা ম্যাৎসিনি বলেছেন - জাতীয়তাবাদ বিভিন্ন জাতির ভেতর নানা গুণ ও প্রতিভার বিকাশ ঘটায় এবং মানবসভ্যতাকে উন্নত করে তোলে। জাতীয়তাবাদ নিজ জাতি ও দেশকে ঐক্য, আত্মত্যাগ ও আদর্শের পথে অনুপ্রাণিত করে।
2. মূল বৈশিষ্ট্যসমূহ : জাতীয়তাবাদের কয়েকটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য হল -
[i] জাতীয়তাবাদ একটি আদর্শভিত্তিক চিন্তাধারা।
[ii] জাতীয়তাবাদের প্রেরণায় পরাধীন জাতি স্বাধীনতা অর্জনের জন্য সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
[iii] জাতীয়তাবাদ কোনো জাতিকে তার নিজস্ব পরিচয় ও স্বাতন্ত্র্য সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। অর্থাৎ, যখন কোনো জাতি নিজের স্বতন্ত্র সত্ত্বা উপলব্ধি করে, তখনই জাতীয়তাবাদের জন্ম হয়।
[iv] এটি জাতিকে ঐক্যবোধ ও দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে।
[v] এটি নিজের জাতির প্রতি ভালোবাসার পাশাপাশি অন্য জাতির সঙ্গে সহযোগিতা ও সম্প্রীতির সম্পর্ক গড়ে তোলে।
সুতরাং, জাতীয়তাবাদের মূল কথা হলো — “নিজে বাঁচো এবং অন্যকেও বাঁচতে দাও।”
3. ত্রুটি : জাতীয়তাবাদ অনেক সময় জাতির মধ্যে অতিরিক্ত আবেগের সৃষ্টি করে। এর ফলে নিজেদের জাতিকে শ্রেষ্ঠ মনে করে অন্য জাতির প্রতি ঘৃণা ও বিদ্বেষ জন্মায়। একে বলা হয় উগ্র বা বিকৃত জাতীয়তাবাদ। এই বিকৃত জাতীয়তাবাদই বিশ্বশান্তির পথে বড় বাধা সৃষ্টি করে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যথার্থই বলেছেন — “জাতীয়তা সভ্যতার সংকট স্বরূপ।”
সারসংক্ষেপ : সব শেষে বলা যায়, কোনো জাতির ভেতরে একাত্মবোধ থেকেই জাতীয়তাবাদের জন্ম হয়। প্রতিটি জাতিরই নিজস্ব স্বাধীন সত্ত্বা থাকে। যখন অন্য কোনো জাতি সেই স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে, তখন জাতীয়তাবোধ জেগে ওঠে। উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে বিদেশি ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে ভারতে জাতীয়তাবাদের সূচনা ঘটে।
2. 'আলিগড় আন্দোলন' বলতে কী বোঝ ?
অথবা,
টীকা লেখো : আলিগড় আন্দোলন।
উত্তর : ভূমিকা : উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ভারতে ধর্ম ও সমাজসংস্কারের বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়। এই সংস্কার আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাস দূর করা। যেমন : রামমোহন রায় ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর হিন্দু সমাজে সংস্কারের কাজ করেছিলেন, তেমনি মুসলিম সমাজে সংস্কারের ক্ষেত্রেও স্যার সৈয়দ আহমদ খান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। তাঁর নেতৃত্বে পরিচালিত এই সংস্কার আন্দোলনই ‘আলিগড় আন্দোলন’ নামে পরিচিত।
আলিগড় আন্দোলন :
1. উদ্ভব / প্রেক্ষাপট : স্যার সৈয়দ আহমদ খান ছিলেন একজন মুসলিম শিক্ষাবিদ ও সমাজসংস্কারক। তিনি দেখেন, শিক্ষায় ও জীবিকার ক্ষেত্রে মুসলমানরা হিন্দুদের তুলনায় পিছিয়ে পড়েছে। তাঁর মতে, এর কারণ ছিল ব্রিটিশদের প্রতি বিরাগ ও পাশ্চাত্য শিক্ষায় অনীহা। তাই মুসলিম সমাজকে উন্নতির পথে এগিয়ে নিতে তিনি ইংরেজি শিক্ষার প্রসার ও সমাজসংস্কারের কাজে আত্মনিয়োগ করেন।
2. আলিগড় আন্দোলনের সূচনা : মুসলমান সমাজে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসারের লক্ষ্যে তিনি কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল ‘আলিগড় অ্যাংলো-ওরিয়েন্টাল কলেজ’ (১৮৭৫ খ্রিঃ)। এই কলেজকে কেন্দ্র করেই শুরু হয় তাঁর পরিচালিত ‘আলিগড় আন্দোলন’। এই প্রতিষ্ঠানে বহু পণ্ডিত অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন - যেমন ইউসুফ আলি, মৌলবি নাজির আহমদ ও শিবলী নোমানী প্রমুখ। এখানে সাহিত্য, বিজ্ঞান, ধর্ম, দর্শন ও তর্কশাস্ত্রসহ নানা বিষয়ে শিক্ষা দেওয়া হত। এর উদ্দেশ্য ছিল ইসলামীয় মূল্যবোধ বজায় রেখে মুসলিম ছাত্রদের আধুনিক জ্ঞান ও যুক্তিবাদী চিন্তায় শিক্ষিত করা, যাতে কুসংস্কারমুক্ত এক নতুন সমাজ গড়ে ওঠে।
3. উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য : এই আন্দোলনের প্রধান কয়েকটি লক্ষ্য ছিল - [i] ধর্মীয় গোঁড়ামির বিরোধিতা ও প্রকৃত ইসলাম অনুসরণ, [ii] মুসলমানদের মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষা ও বিজ্ঞানচর্চার প্রসার। ও [iii] ব্রিটিশদের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন।
মূল্যায়ন : এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল মুসলমান সমাজকে কুসংস্কারমুক্ত ও প্রগতিশীল পথে পরিচালিত করা। উদ্দেশ্য ছিল মহৎ, তবে ব্রিটিশ অধ্যক্ষদের ঔপনিবেশিক মনোভাব ও কিছু মৌলবিদের রক্ষণশীলতার কারণে আন্দোলন পুরোপুরি সফল হয়নি। তবুও মুসলিম সমাজে শিক্ষা, সংস্কার ও আধুনিক চিন্তাধারার প্রসারে আলিগড় আন্দোলনের অবদান ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
3. আলিগড় আন্দোলনে থিওডোর বেকের অবদান লেখো।
অথবা,
থিওডোর বেক কে ছিলেন ? [HS Model Question]
উত্তর : ভূমিকা : উনবিংশ শতকে মুসলমান সমাজে যুক্তিবাদী সংস্কার আন্দোলনের সূচনা করেন স্যার সৈয়দ আহমদ খান। মুসলমানদের মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রচারের উদ্দেশ্যে তিনি ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেন ‘আলিগড় অ্যাংলো-ওরিয়েন্টাল কলেজ’। এই কলেজের অধ্যক্ষ ব্রিটিশ শিক্ষাবিদ থিওডোর বেক শিক্ষার প্রসার ও সংস্কার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
থিওডোর বেক :
1. জন্ম ও শিক্ষা : তিনি ছিলেন এক ব্রিটিশ শিক্ষাবিদ, যিনি ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা শেষ করে তিনি ভারতে এসে আলিগড় কলেজের অধ্যক্ষ পদে যোগ দেন।
2. পেশাগত জীবন : তিনি ছিলেন ‘সোসাইটি অফ ফ্রেন্ডস’-এর সদস্য ও এক বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ। ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত তিনি আলিগড় অ্যাংলো-ওরিয়েন্টাল কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ হেনরি অব ইম্পে সিড্ডন অসুস্থ হয়ে পদত্যাগ করলে ২৪ বছর বয়সে স্যার সৈয়দ আহমদের আহ্বানে তিনি অধ্যক্ষের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
3. আলিগড় আন্দোলনে ভুমিকা : স্যার সৈয়দ আহমদ প্রতিষ্ঠিত আলিগড় কলেজকে কেন্দ্র করে মুসলিম সমাজে যে পুনরুজ্জীবনের সূচনা হয়েছিল, সেটিই ‘আলিগড় আন্দোলন’ নামে পরিচিত। এই আন্দোলনে থিওডোর বেক ছিলেন স্যার সৈয়দের ঘনিষ্ঠ সহযোগী।
[ক] আধুনিক শিক্ষায় অবদান : অধ্যক্ষ হিসেবে তিনি মুসলিম ছাত্রদের মধ্যে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষা ও জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রসারে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।
[খ] সাম্প্রদায়িকতা প্রসারে ভূমিকা : তিনি স্যার সৈয়দ আহমদকে কংগ্রেসের বিরোধিতা করতে উৎসাহিত করেন। তাঁর সহযোগিতায় ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে ‘ঐক্যবদ্ধ ভারতীয় দেশপ্রেমিক সংঘ’ এবং ১৮৯৩ খ্রিস্টাব্দে ‘মহামেডান অ্যাংলো-ওরিয়েন্টাল ডিফেন্স অ্যাসোসিয়েশন’ গঠিত হয়। এসব সংগঠনের মাধ্যমে তিনি মুসলমানদের জন্য সরকারি সহায়তা আদায়ের চেষ্টা করেন। বেক তাঁর সম্পাদিত ইনস্টিটিউট গেজেট পত্রিকায় হিন্দু ও কংগ্রেসবিরোধী প্রচার চালান।
মূল্যায়ন : তিনি দক্ষতার সঙ্গে মুসলমান সমাজকে সংঘবদ্ধ করে ভারতে ব্রিটিশ শাসনকে মজবুত করার চেষ্টা করেন। তাঁর উদ্দেশ্য ছিল মুসলিম স্বার্থরক্ষা ও ঔপনিবেশিক শাসনকে টিকিয়ে রাখা। তাঁর প্রভাবে স্যার সৈয়দ আহমদের চিন্তায় সাম্প্রদায়িকতা ও সংকীর্ণতা দেখা দেয়-এ কথা গবেষক রফিক জাকারিয়া উল্লেখ করেছেন।
4. মুসলিম লিগের প্রতিষ্ঠা (১৯০৬ খ্রিস্টাব্দ) সম্পর্কে টীকা লেখো।
উত্তর : ভূমিকা : ভারতীয় রাজনীতিতে ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম লিগের প্রতিষ্ঠা ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা । ব্রিটিশ শাসনামলে প্রথমবার ধর্মের ভিত্তিতে একটি রাজনৈতিক দল গঠিত হয়। ধর্মভিত্তিক এই রাজনীতি পরবর্তীকালে ভারতের জাতীয় আন্দোলনের জন্য ক্ষতিকর প্রমাণিত হয়। আসলে মুসলিম লিগের প্রতিষ্ঠা হঠাৎ হয়নি, এটি ছিল অনেক দিনের একটি প্রক্রিয়ার ফল।
মুসলিম লিগ :
1. পটভূমি : উনিশ শতকের শেষের দিকে মুসলিম বিত্তবান শ্রেণি মুসলমানদের অধিকার রক্ষার জন্য ব্রিটিশ সরকারের সাহায্য চাইতে শুরু করেন।
2. সিমলা বৈঠক (১৯০৬) : ১৯০৬ সালে আগা খাঁর নেতৃত্বে মুসলিম প্রতিনিধি দল সিমলায় লর্ড মিন্টোর সঙ্গে দেখা করে। তাঁরা সরকারি পদে নিয়োগ ও পরিষদে মুসলমানদের জন্য আসন সংরক্ষণের দাবি তোলেন। এই সাক্ষাৎ ‘সিমলা দৌত্য’ বা ‘সিমলা বৈঠক’ নামে পরিচিত। লর্ড মিন্টো এসব দাবিতে সম্মতি জানান।
3. মুসলমানদের পৃথক দলগঠনের দাবি : সিমলা বৈঠকের সাফল্যকে আগা খাঁ মুসলমানদের ‘জাতির মধ্যে জাতি’ হিসেবে সরকারি স্বীকৃতি বলে মনে করেন। তবে তরুণ প্রজন্ম মনে করল, মুসলমানদের স্বার্থরক্ষার জন্য একটি স্বতন্ত্র রাজনৈতিক দল প্রয়োজন। এই উদ্যোগে ঢাকার নবাব সলিমউল্লাহ খাঁ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন এবং ‘সর্বভারতীয় মুসলিম মৈত্রী সংঘ’ গঠনের প্রস্তাব দেন।
4. মুসলিম লিগের জন্ম (১৯০৬) : ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত 'মহামেডান এডুকেশনাল কনফারেন্স'-এ মুসলমানদের রাজনৈতিক দল গঠনের প্রস্তাব দেন ভিকার-উল-মূলক। তাঁর প্রস্তাব সমর্থন করেন হাকিম আজমল খাঁ। ফলস্বরূপ গঠিত হয় 'অল ইন্ডিয়া মুসলিম লিগ'। এর যুগ্ম-সম্পাদক হন মহসিন-উল-মূলক ও ভিকার-উল-মূলক।
5. লিগের উদ্দেশ্য : মুসলিম লিগের চারটি প্রধান লক্ষ্য ছিল। যেমন : [i] ব্রিটিশ সরকারের প্রতি মুসলমানদের আনুগত্য প্রচার, [ii] মুসলমানদের স্বার্থরক্ষা, [iii] অন্যান্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে সৌহার্দ্য বজায় রাখা, ও [iv] জাতীয় কংগ্রেসের প্রভাব হ্রাস করা।
6. রাজনৈতিক প্রভাব ও ফলাফল : মুসলিম লিগের প্রতিষ্ঠা ভারতীয় রাজনীতিতে বিভাজনের সূচনা করে। বিপান চন্দ্রের মতে, এর ফলে জাতীয় সংহতি নষ্ট হয়। লিগের উদ্দেশ্য ছিল কংগ্রেসের ব্রিটিশ-বিরোধী কার্যকলাপকে দুর্বল করা। এর ফলেই হিন্দু-মুসলিম ঐক্য ভেঙে পড়ে এবং পরিণামে ভারত বিভাজিত হয়ে ‘পাকিস্তান’ রাষ্ট্রের জন্ম হয়।
5. সর্বভারতীয় 'হিন্দু মহাসভা'-র প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে লেখো।
অথবা,
টাকা লেখো : সর্বভারতীয় হিন্দু মহাসভা।
উত্তর : ভূমিকা : ব্রিটিশ সরকার ভারতে ‘বিভাজন ও শাসন’-নীতির মাধ্যমে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিরোধ সৃষ্টি করে। এই বিভাজনমূলক নীতির ফলেই ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম সম্প্রদায়ের স্বতন্ত্র সংগঠন ‘মুসলিম লিগ’-এর জন্ম হয়। পরবর্তীতে এর প্রতিক্রিয়াস্বরূপ হিন্দু পুনরুজ্জীবনবাদীরা নিজেদের পৃথক সংগঠন গঠনের উদ্যোগ নেন, যার ফলেই প্রতিষ্ঠিত হয় ‘হিন্দু মহাসভা’।
হিন্দু মহাসভা :
1. পাঞ্জাব হিন্দু সভার গঠন : ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম লিগ গঠনের পরের বছরেই আর্য সমাজের নেতা লালা লাজপত রায় ও সাদিলালের উদ্যোগে ‘পাঞ্জাব হিন্দু সভা’ নামের একটি হিন্দু সংগঠন প্রতিষ্ঠিত হয় (১৯০৯ খ্রিস্টাব্দ)। লাহোরে এর প্রথম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়, যার সভাপতিত্ব করেন শ্রী মদনমোহন মালব্য। সংগঠনের দাবি ছিল এটি কোনো সাম্প্রদায়িক প্রতিষ্ঠান নয়। পরে ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে এলাহাবাদ অধিবেশনে একটি সর্বভারতীয় হিন্দু সংগঠন গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
2. হিন্দু মহাসভার প্রতিষ্ঠা :
(i) প্রথমে ‘পাঞ্জাব হিন্দু সভা’-র উদ্যোগে সর্বভারতীয় হিন্দু সংগঠন গঠনের কথা ভাবা হয়। ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দে আম্বালাতে অনুষ্ঠিত সভায় স্থির করা হয় যে, কুম্ভমেলার সময় হিন্দু নেতাদের একত্রিত করে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
(ii) এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের ৩ ফেব্রুয়ারি হরিদ্বারে প্রথম প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে লখনউ ও দিল্লির বহু হিন্দু নেতা উপস্থিত ছিলেন।
(iii) একই বছরের এপ্রিল মাসে কুম্ভমেলায় মদনমোহন মালব্যের উদ্যোগে ‘সর্বদেশক হিন্দু সভা’ প্রতিষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন রাজা মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দী। তিনি ভাষণে বলেন, হিন্দু সমাজের উন্নতি ও স্বার্থরক্ষাই হবে এই সংগঠনের প্রধান লক্ষ্য।
(iv) পরবর্তীকালে ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে সর্বদেশক হিন্দু সভার নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ‘অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভা’ এবং রাজা মণীন্দ্রচন্দ্র নন্দী প্রথম সভাপতি হন।
3. প্রধান সংগঠক ও নেতা : হিন্দু মহাসভার প্রতিষ্ঠায় প্রধান ভূমিকা পালন করেন পণ্ডিত মদনমোহন মালব্য ও লালা লাজপত রায়। তাঁদের পাশাপাশি স্বামী প্রদানন্দ, লালা হংসরাজ এবং তেজবাহাদুর সপ্ত প্রমুখ নেতাও এই সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন।
4. উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য : হিন্দু মহাসভার প্রধান লক্ষ্য ছিল - [i] হিন্দুদের মধ্যে ঐক্য স্থাপন, [ii] হিন্দু সমাজের উন্নতি সাধন, [iii] ধর্মান্তরিত হিন্দুদের স্বধর্মে ফিরিয়ে আনা, ও [iv] বাল্যবিবাহ, জাতিভেদ ও অস্পৃশ্যতা দূর করা।
মূল্যায়ন : হিন্দু মহাসভার প্রতিষ্ঠা ভারতের জাতীয় ঐক্যের পক্ষে ক্ষতিকর ছিল। মুসলিম লিগের প্রতিক্রিয়ায় গঠিত এই সংগঠন জাতীয় রাজনীতিতে বিভাজন ও উত্তেজনার পরিবেশ সৃষ্টি করে।
🔹 লেখকের শেষ মন্তব্য :
দ্বাদশ শ্রেণির চতুর্থ অধ্যায়ের প্রথম পর্ব : 'আলিগড় আন্দোলন, মুসলিম লিগের জন্ম, হিন্দু মহাসভা 'থেকে আমাদের সাজেশন E-Book(PDF)গুলিতে আরো অনেকগুলি 3 নম্বর মানের, 4 নম্বর মানের, এবং 8 নম্বর মানের খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর আছে। সেগুলি পেতে হলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন অথবা উপরের Menu Option ক্লিক করে দেখতে পারেন।
File Details :
PDF Name : আলিগড় আন্দোলন, মুসলিম লিগের জন্ম, হিন্দু মহাসভা PDF
| আরো পড়ুন | প্রশ্নোত্তর |
|---|---|
| 1. ক্লাস 12 বিদ্রোহ এবং ব্রিটিশরাজ PDF | Click here |
| 2. ক্লাস 12 শিক্ষাবিজ্ঞান শিখন এবং শিখন কৌশল | Click here |
| 3. ক্লাস 12 জাতীয়তাবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদ | Click here |
WB Semester Team
📞 & 💬 9883566115
