WB Semester Display Ads-1

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

ক্লাস 12 জাতীয়তাবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদ | দ্বাদশ শ্রেণির চতুর্থ সেমিস্টার ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর | Class 12 Semester 4 History Question Answer

0

ক্লাস 12 ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় : জাতীয়তাবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদ


ভূ(caps)মিকা : দ্বাদশ শ্রেণির চতুর্থ সেমিস্টার ইতিহাস বিষয়ে 40 নম্বরের লিখিত পরীক্ষা হবে। এই 40 নম্বর এর মধ্যে ইতিহাস সিলেবাসের চতুর্থ অধ্যায় : 'জাতীয়তাবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদ' থেকে মোট 19 নম্বর আসবে। অর্থাৎ 3 নম্বর মানের 2 টি প্রশ্ন থাকবে, যে-কোন 1 টি করতে হবে এবং 4 নম্বর মানের 4 টি প্রশ্ন থাকবে, যে-কোন 2 টি করতে হবে ও 8 নম্বর মানের 2 টি প্রশ্ন থাকবে, যে-কোন 1 টি প্রশ্নের উত্তর করতে হবে। তাহলে মোট 3+8+8=19 নম্বর। তাই এই অধ্যায়টি পরীক্ষার জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই পর্বে দ্বাদশ শ্রেণির চতুর্থ সেমিস্টার ইতিহাস সিলেবাসের চতুর্থ অধ্যায় : 'জাতীয়তাবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদ' থেকে 3 নম্বর মানের এবং 4 নম্বর মানের প্রশ্ন উত্তরসহ PDF নিচে দিলাম। তবে দ্বাদশ শ্রেণির চতুর্থ সেমিস্টার সাজেশন ই-বুকগুলি(PDF) সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে আমাদের ওয়েবসাইটের Menu Option এ ক্লিক করে দেখতে পারেন। 

ক্লাস 12 জাতীয়তাবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদ

🔹 দ্বাদশ শ্রেণির চতুর্থ সেমিস্টার ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর

[প্রতিটি প্রশ্নের মান : 3/4]
1. জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠায় অ্যালান অক্টোভিয়ান হিউমের অবদান লেখো।
অথবা, 
অ্যালান অক্টোভিয়ান হিউমকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার জনক বলা যায় কি?
অথবা, 
অ্যালান অক্টোভিয়ান হিউম কেন বিখ্যাত ?
উত্তর : ভূমিকা : ১৮৮৫ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা হয়, যা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। তবে এর উদ্ভব নিয়ে বিভিন্ন মতামত ও বিতর্ক থাকলেও এখন আমি নিচে জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠায় অ্যালান অক্টোভিয়ান হিউমের অবদান সম্পর্কে আলোচনা করছি -
জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠায় অ্যালান অক্টোভিয়ান হিউমের অবদান :
1. সেফটি ভালভ তত্ত্ব : হিউমের জীবনীকার উইলিয়াম ওয়েডারবার্ন বলেছেন, হিউম সরকারি নথি দেখে বুঝেছিলেন যে ভারতে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে গণবিদ্রোহ হতে পারে। তাই ব্রিটিশ সরকারের স্বার্থ রক্ষার জন্য তিনি কংগ্রেসের মতো একটি সর্বভারতীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার উদ্যোগ নেন। এটিকে ‘সেফটি ভালভ তত্ত্ব’ বলা হয়।
2. হিউম-ডাফরিন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব : উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়সহ অনেকেই বলেছেন, হিউম তৎকালীন বড়োলাট ডাফরিনের সঙ্গে দেখা করে ভারতীয়দের ক্ষোভের কথা জানান। ডাফরিন তাঁকে একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পরামর্শ দেন। এটিকে ‘হিউম-ডাফরিন ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ বলা হয়। তবে কিছু ঐতিহাসিক এটি মেনে নেননি।
3. হিউমের অবদান নিয়ে মতবিরোধ : কিছু ইতিহাসবিদ, যেমন সি এফ অ্যান্ড্রুজ, রজনীপাম দত্ত, গিরিজা মুখার্জী ও উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় হিউমকে জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠায় মুখ্য বলে মনে করেন। অন্যদিকে ড. বিপান চন্দ্র, ড. অমলেশ ত্রিপাঠি ও ড. সুমিত সরকার হিউমের অবদানকে নগণ্য বলে দেখেছেন।
মূল্যায়ন : আলোচনা শেষে বলতে পারি, ভারতের জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠায় হিউমের অবদান নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। একটি সর্বভারতীয় প্রতিষ্ঠান এককভাবে কোনো একজন ব্যক্তির দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হওয়া সম্ভব নয়; এটি বহু প্রতিক্রিয়া ও প্রয়াসের ফল।

2. নরমপন্থী ও চরমপন্থীদের মধ্যে মূল পার্থক্যগুলি উল্লেখ করো।
অথবা, 
নরমপন্থী ও চরমপন্থীদের লক্ষ্য ও আন্দোলনের পদ্ধতিগত পার্থক্য লেখো।
উত্তর : ভূমিকা : জাতীয় কংগ্রেসের প্রথম দুই দশক (১৮৮৫-১৯০৫) পর্যন্ত নেতা সাধারণত 'নরমপন্থী' নামে পরিচিত ছিলেন। নরমপন্থীদের নিয়মমাফিক আন্দোলনের কারণে কংগ্রেসের ভেতরে 'চরমপন্থী' গোষ্ঠী গড়ে ওঠে। ১৯০৭ সালে সুরাট অধিবেশনে কংগ্রেস দুই ভাগে বিভক্ত হয়: নরমপন্থী ও চরমপন্থী। এদের মধ্যে লক্ষ্য ও আন্দোলনের পদ্ধতির দিক থেকে কিছু মৌলিক পার্থক্য দেখা যায়। এগুলি হল-
নরমপন্থী ও চরমপন্থীদের মূল পার্থক্য :
1. লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যগত পার্থক্য : নরমপন্থীরা ব্রিটিশ শাসনকে ভালো কিছু হিসেবে দেখতেন এবং ব্রিটিশদের ওপর আস্থা রাখতেন। তারা মনে করতেন ভারতবাসীর জন্য ব্রিটিশ শাসন থাকা ভালো, এবং এর মাধ্যমে কিছু সুযোগসুবিধা পাওয়া যায়। কিন্তু চরমপন্থীদের মূল লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ শাসনের উচ্ছেদ এবং পুরো স্বাধীনতা বা স্বরাজ পাওয়া।
2. কর্মসূচিগত পার্থক্য : নরমপন্থীরা তাদের কর্মসূচি প্রতি বছরের তিন দিনের অধিবেশনে ঠিক করতেন এবং সরকারের কাছে আবেদন-নিবেদন করতেন। তারা ব্রিটিশবিরোধী কোনো সরাসরি কর্মসূচি করতেন না। কিন্তু চরমপন্থীরা সরাসরি সংগ্রামের মাধ্যমে ব্রিটিশ শাসন উচ্ছেদ করতে চেয়েছিলেন। তাঁদের মূল হাতিয়ার ছিল 'স্বদেশি' ও 'বয়কট'।
3. আন্দোলনের পদ্ধতিগত পার্থক্য : নরমপন্থীরা প্রত্যক্ষ সংগ্রামের পরিবর্তে নরমপন্থা ও আবেদন-নিবেদন নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। অনেকেই তাদেরকে 'রাজনৈতিক ভিক্ষুক' বলত। কিন্তু চরমপন্থীরা নিজের শক্তি ও আত্মবলিদান ব্যবহার করে স্বাধীনতা পেতে চেয়েছিলেন এবং ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াই করতেন।
4. আদর্শগত পার্থক্য : নরমপন্থীরা তাদের রাজনৈতিক চিন্তাধারায় পাশ্চাত্য সভ্যতা ও সংস্কৃতিকে গুরুত্ব দিতেন। কিন্তু চরমপন্থীরা হিন্দুধর্ম ও প্রাচীন ভারতীয় ঐতিহ্যকে তাদের রাজনৈতিক আদর্শের মূল ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করতেন।
মূল্যায়ন : নরমপন্থী ও চরমপন্থীর মধ্যে লক্ষ্য, আদর্শ, কর্মসূচি ও আন্দোলনের পদ্ধতি সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল। নরমপন্থীরা শান্তিপূর্ণ আবেদন-নিবেদন ও নিয়মমাফিক পদ্ধতিতে কাজ করলেও, চরমপন্থীরা সরাসরি সংগ্রাম ও আত্মবলিদানের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের চেষ্টা করতেন।

3. অসহযোগ আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণগুলি উল্লেখ করো।
অথবা, 
অসহযোগ আন্দোলন কেন ব্যর্থ হয়েছিল ?
উত্তর : ভূমিকা : গান্ধিজির নেতৃত্বে প্রথম বড় জাতীয় আন্দোলন ছিল অহিংস অসহযোগ আন্দোলন। এই আন্দোলনে দেশের সবাই অংশ নিয়েছিল। কিন্তু চৌরিচৌরা ঘটনার পর গান্ধিজি হঠাৎ এই আন্দোলন বন্ধ করে দেন। ফলে এটি শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি। ইতিহাসবিদরা এই আন্দোলনের ব্যর্থতার অনেকগুলি কারণ উল্লেখ করলেও আমি নিচে প্রধান পাঁচটি কারণ তুলে ধরলাম -
অসহযোগ আন্দোলনের ব্যর্থতার কারণ :
1. গান্ধিজির একক নেতৃত্ব : ১৯২০ সালে জাতীয় কংগ্রেসে গান্ধিজি নেতৃত্বে আসেন এবং আন্দোলন তাঁর নীতি অনুযায়ী পরিচালিত হয়। এই ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা ছিল বড় ত্রুটি। মতিলাল নেহরুর কথায় "গান্ধিজি কোনো দলের ওপর নির্ভর না-করে ব্যক্তিগত আন্দোলন পরিচালনা করতে চেয়েছিলেন।" তাই তিনি কারও মত না নিয়ে একাই আন্দোলন বন্ধ করে দেন।
2. খিলাফত আন্দোলনের সংযোগ : গান্ধিজি অসহযোগ আন্দোলন খিলাফত আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত করলে সাময়িক হিন্দু-মুসলমান ঐক্য হয়, কিন্তু পরে ফাটল পড়ে। ফলে মুসলিমরা আন্দোলন থেকে সরে যায়।
3. পর্যাপ্ত প্রস্তুতির অভাব : অনেকেই মনে করেন, অসহযোগ আন্দোলনের ব্যর্থতার জন্য গান্ধিজি কিছুটা দায়ী। একটি দেশের সব অঞ্চলে আন্দোলন চালানোর জন্য যে ধরনের প্রস্তুতি প্রয়োজন, তা এই ক্ষেত্রে যথেষ্ট ছিল না।
4. জনভিত্তির অভাব : এই আন্দোলনের মূলভিত্তি ছিল ধনী, মধ্যবিত্ত ও ছাত্রসমাজ। কিন্তু তাদের আক্রমণের লক্ষ্য ব্রিটিশ সরকারের পরিবর্তে জমিদার-মালিকদের বিরুদ্ধে ছিল। তাই ইতিহাসবিদ বি এন পান্ডে বলেছেন, মধ্যবিত্তের পূর্ণ সমর্থন না থাকায় আন্দোলন শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়।
5. আদর্শের অস্পষ্টতা : গান্ধিজির কাছে অহিংস সত্যাগ্রহ স্পষ্ট ছিল, কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে তা পরিষ্কার ছিল না। তাই ভারতের বিভিন্ন জাতি ও ধর্মের মানুষ নিয়ে অহিংসভাবে আন্দোলন চালানো কঠিন হয়ে পড়েছিল। তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ চৌরিচৌরার ঘটনা।
6. সরকারি কঠোর দমননীতি : এই আন্দোলনের আর একটি কারণ ছিল সরকারের কঠোর দমননীতি। বড়োলাট লর্ড রিডিং-এর দমননীতি আন্দোলনকে দুর্বল করে দেয়। গান্ধিজি ও অন্যান্য নেতাদের গ্রেফতারে আন্দোলন অনেকটা থমকে পড়ে।
মূল্যায়ন : এই আন্দোলন নানা কারণে ব্যর্থ হলেও ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে এটি একটি খুব গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এটি ভারতবাসীকে পরবর্তী বৃহত্তর সংগ্রামের জন্য প্রস্তুত করেছিল।

4. আলিগড় আন্দোলনের সীমাবদ্ধতা/ত্রুটি উল্লেখ করো।
উত্তর : ভূমিকা : স্যার সৈয়দ আহমদ মুসলমান সমাজের উন্নতির জন্য আলিগড় কলেজ গড়ে তোলেন। এই কলেজকে কেন্দ্র করে যে সংস্কার আন্দোলন শুরু হয়, সেটিই ‘আলিগড় আন্দোলন’ নামে পরিচিত। এই আন্দোলন মুসলমান সমাজে আধুনিকতার শুরু করেছিল, তবে এর কিছু সীমাবদ্ধতাও ছিল।
আলিগড় আন্দোলনের সীমাবদ্ধতা : 
1. সাম্প্রদায়িক বিভাজন : এই আন্দোলনের ফলে ভারতে সাম্প্রদায়িক ভাবনা ও বিচ্ছিন্নতার বীজ রোপিত হয়, এই কথা অনেকে মনে করেন। এর ফলেই পরবর্তীতে মুসলমানদের জন্য আলাদা রাষ্ট্রের দাবি জোরালো হয়ে ওঠে। ড. রাজেন্দ্র প্রসাদ তাঁর Divided India গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, আলিগড় কলেজের অধ্যক্ষ থিওডোর বেক ব্রিটিশ স্বার্থে হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির প্রচার চালিয়েছিলেন।
2. দ্বিজাতিতত্ত্বের উদ্ভব : সৈয়দ আহমদ শুরুতে হিন্দু-মুসলমান ঐক্যের কথা বলতেন, কিন্তু পরে মত বদলান। তিনি বলেন, হিন্দু ও মুসলমান দুটি আলাদা জাতি, তাদের স্বার্থ ভিন্ন। এই মতবাদ ‘দ্বিজাতিতত্ত্ব’ নামে পরিচিত হয় এবং সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তি গড়ে তোলে।
3. ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আনুগত্য : সৈয়দ আহমদ খানের নেতৃত্বে পরিচালিত আলিগড় আন্দোলনের মূল লক্ষ্য ছিল ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন। ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আনুগত্যের নীতি ভারতের জাতীয় স্বার্থের বিরোধী ছিল।
4. সংস্কার কর্মসূচির বিরোধিতা : কিছু মুসলিম ধর্মগুরু সৈয়দ আহমদের সংস্কার কাজে বিরোধিতা করেন। ফলে তাঁর সংস্কার প্রচেষ্টা পুরোপুরি সফল হয়নি।
মূল্যায়ন : এই আন্দোলন মুসলিম সমাজে আধুনিক চিন্তা ও শিক্ষার সূচনা করেছিল। তবে এর কারণে ভারতে সাম্প্রদায়িকতার উদ্ভব হয় এবং হিন্দু-মুসলিম বিরোধের ফলে ব্রিটিশ-বিরোধী জাতীয় আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে।

5. ভারত ছাড়ো আন্দোলনের পটভূমি ও প্রেক্ষাপট লেখো।
উত্তর : ভূমিকা : ভারত ছাড়ো আন্দোলন (১৯৪২) ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় । এটি ভারতের মুক্তিসংগ্রামের শেষ সর্বভারতীয় গণ আন্দোলন। ১৯৪২ সালের আগস্টে হওয়ায় এটিকে 'আগস্ট আন্দোলন' বা 'আগস্ট বিপ্লব' বলা হয়। আন্দোলনের পিছনে একাধিক কারণ ছিল।
ভারত ছাড়ো আন্দোলনের পটভূমি ও প্রেক্ষাপট :
1. ক্রিপস মিশনের ব্যর্থতা : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভারতবাসীর সহযোগিতা চেয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল ও মন্ত্রীসভার সদস্য স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপসের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল ভারতে পাঠানো হয়, যা ক্রিপস মিশন নামে পরিচিত। ভারতের আশা জাগানো প্রস্তাবনা হলেও, এটি ভারতীয়দের প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়। ফলে ভারতবাসী বুঝতে পারে, স্বাধীনতা পেতে হলে প্রত্যক্ষ সংগ্রাম ছাড়া কোন উপায় নেই।
2. জাপানি আক্রমণের সম্ভাবনা : ১৯৪২ সালে জাপান অক্ষশক্তির সঙ্গে যোগ দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ভারতের সীমান্ত পর্যন্ত আসে। এতে জাপানের হামলার আশঙ্কা বেড়ে যায়। ভারতীয়রা মনে করে, ব্রিটিশরা দ্রুত দেশ ছাড়বে না, তাই দেশ নিরাপদ থাকবে না। এজন্য নেতারা ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলন শুরু করতে চায়। মৌলানা আজাদ বলেন, জাপানি হুমকি গান্ধিজিকে গণ আন্দোলন চালানোর প্রেরণা দেয়।
3. স্বাধীনতার তীব্র আকাঙ্ক্ষা : অসহযোগ ও আইন অমান্য আন্দোলন ব্যর্থ হলেও ভারতীয়দের মধ্যে স্বাধীনতার চাওয়া আরও তীব্র হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে তারা নতুন একটি সর্বভারতীয় গণ আন্দোলন গড়ে তোলে।
4. ব্রিটিশ সরকারের দমননীতি : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের ওপর নির্যাতন চালায় এবং ব্রিটিশ-বিরোধী কার্যকলাপ কঠোরভাবে দমন করে। এই দমননীতি ভারতীয়দের আন্দোলন গড়ে তোলার প্রেরণা দেয়।
5. অর্থনৈতিক সমস্যা : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে দাম বাড়া, কর বেড়ে যাওয়া, খাদ্য সংকট ও বেকারত্ব ভারতবাসীকে কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলে। সরকার এর কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তাই ভারতীয়রা ব্রিটিশ শাসন শেষ করতে গণ আন্দোলনের প্রয়োজন অনুভব করে।
6. গান্ধিজির দৃঢ় মনোভাব : গান্ধিজির অনমনীয় মনোভাব: ভারত ছাড়ো আন্দোলনের পেছনে গান্ধিজির ব্রিটিশ-বিরোধী দৃঢ় মনোভাব ছিল। ভারত ছাড়ো আন্দোলনের সময় গান্ধিজি ব্রিটিশ-বিরোধী ছিলেন। জাপানি আক্রমণের মোকাবিলায় নেহরু ও আজাদ ব্রিটিশদের সহযোগিতা চেয়েছিলেন। কিন্তু গান্ধিজি চাইলেন ব্রিটিশদের সরিয়ে ভারতকে রক্ষা করা হোক। এজন্য তিনি 'হরিজন' পত্রিকায় ব্রিটিশদের ভারত ছাড়ার পরামর্শ দেন এবং সেখানে ভারত ছাড়ো আন্দোলন শুরুর কথা জানান। শেষ পর্যন্ত নেহরু ও আজাদ গান্ধিজির মনোভাব মেনে নেন।
মূল্যায়ন : আলোচ্য আলোচনার পরিশেষে বলা যায়, ক্রিপস মিশনের ব্যর্থতা, জাপানি আক্রমণের আশঙ্কা, অর্থনৈতিক দুরবস্থা, স্বাধীনতার তীব্র আকাঙ্ক্ষা এবং গান্ধিজির অনমনীয় মনোভাব ভারত ছাড়ো আন্দোলনের পটভূমি তৈরি করে।

6. ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে নৌবিদ্রোহের কারণগুলি লেখো।
উত্তর : ভূমিকা : ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলন হল ভারতীয় নৌবাহিনীর বিদ্রোহ (১৯৪৬)। ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৬ সালে বোম্বাইয়ের 'তলোয়ার' জাহাজে ভারতীয় নাবিকরা প্রথম নৌবিদ্রোহ শুরু করে। এই বিদ্রোহ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের ভিতকে দোলায়ন করে। এই বিদ্রোহের অনেকগুলি কারণ রয়েছে তার মধ্যে প্রধান কারণ গুলি হল -
নৌবিদ্রোহের কারণ : 
1. জাতিগত বৈষম্য : ভারতীয় নৌবাহিনীতে দীর্ঘদিন ধরে তীব্র বর্ণবৈষম্য চলছিল। একই পদে থাকা ভারতীয় নৌসেনাদের তুলনায় শ্বেতাঙ্গ নাবিকরা সব ধরনের সুবিধা পেত। বারবার প্রতিবাদ করেও তারা কোনো সুবিচার পায়নি। তাই ভারতীয় নৌসেনারা বিদ্রোহ শুরু করে।
2. বেতন বৈষম্য : ভারতীয় নৌসেনাদের ক্ষোভের একটি বড় কারণ ছিল বেতন বৈষম্য। একই কাজ বা পদে থাকা ব্রিটিশ নৌসেনাদের তুলনায় তাদের বেতন অনেক কম। প্রতিবাদ করেও কোনো সমাধান হয়নি।
3. যুদ্ধকালীন নিয়োগ ও বরখাস্ত : যুদ্ধ চলাকালীন বহু ভারতীয় নৌসেনাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু যুদ্ধশেষে অনেককে বরখাস্ত করা হয়। এতে তাদের ক্ষোভ বেড়ে যায়।
4. ব্রিটিশ অফিসারদের নিষ্ঠুর আচরণ : ব্রিটিশ অফিসার ও নাবিকরা ভারতীয় নাবিকদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করত। তারা গালিগালাজ করত এবং নানা ধরনের লাঞ্ছনা দিত। বারবার অভিযোগ করেও কোনো সুবিচার না পাওয়ায় ভারতীয় নাবিকরা বিদ্রোহ ঘোষণা করে। 
5. পদোন্নতির সীমাবদ্ধতা : ব্রিটিশ ও ইউরোপীয় নৌ-অফিসারদের পদোন্নতি থাকলেও ভারতীয় নৌসেনাদের কোনো সুযোগ ছিল না। এতে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে বিদ্রোহ করে।
6. খাদ্যের নিম্নমান : ভারতীয় নৌসেনাদের খাদ্যের মান ব্রিটিশ অফিসারদের তুলনায় অত্যন্ত নিম্নমানের ছিল। এর ফলে তারা ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়।
মূল্যায়ন : ১৯৪৬ সালের নৌবিদ্রোহ ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় অধ্যায়। এটি শুধু নৌসেনাদের বিদ্রোহ নয়, বরং ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে দেশের সামরিক বাহিনীর প্রথম সুসংগঠিত প্রতিবাদ হিসেবেও পরিচিত। জওহরলাল নেহরু বলেছেন, এই বিদ্রোহ দেশের সেনাবাহিনীর ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে এবং ভারতের স্বাধীনতার দিকে অগ্রগতিতে বিশেষ প্রেরণা যোগায়।
🔹 লেখকের শেষ মন্তব্য :
দ্বাদশ শ্রেণির চতুর্থ সেমিস্টার ইতিহাস চতুর্থ অধ্যায় : 'জাতীয়তাবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদ' এই অধ্যায় থেকে আমাদের সাজেশন E-Book(PDF)গুলিতে আরো অনেকগুলি 3 নম্বর মানের, 4 নম্বর মানের, ও 8 নম্বর মানের খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর আছে। সেগুলি পেতে হলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন অথবা উপরের Menu Option ক্লিক করে দেখতে পারেন।
File Details :
PDF Name : ক্লাস 12 জাতীয়তাবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদ PDF
Size : 1 MB
No. of Pages : 2
Mode : Read-only (Online)
Download Link : Click here To Download

আরো পড়ুন প্রশ্নোত্তর
1. ক্লাস 12 বিদ্রোহ এবং ব্রিটিশরাজ PDF  Click here
2. ক্লাস 12 শিক্ষাবিজ্ঞান শিখন এবং শিখন কৌশল  Click here
3. পঞ্চম অধ্যায় : সমকালীন ভারতে নাগরিক.. PDF Click here



Regards
WB Semester Team 
📞 & 💬 9883566115

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.