ক্লাস 12 শিক্ষাবিজ্ঞান : শিখন এবং শিখন কৌশল প্রশ্ন উত্তর
🔹 দ্বাদশ শ্রেণির চতুর্থ সেমিস্টার শিক্ষাবিজ্ঞান প্রশ্ন উত্তর PDF
[প্রতিটি প্রশ্নের মান : 5]1. শিখনের সংজ্ঞা দাও। শিখনের বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো ?
অথবা,
কয়েকজন মনোবিজ্ঞানীর ধারণা বিশ্লেষণ করে শিখনের একটি কার্যকরী সংজ্ঞা দাও। [HS-2003]
উত্তর : শিখনের সংজ্ঞা : শিখন হলো একটি মানসিক প্রক্রিয়া। এটি পূর্ব অভিজ্ঞতার সাহায্যে মানুষকে পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে শেখায়। শিখন জন্মের পর থেকে শুরু হয়ে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত চলে। শিখনের সংজ্ঞা নিয়ে নানা মুনি নানা মত রয়েছে। যেমন -
1. মনোবিদ উডওয়ার্থ : এর মতে, চাহিদার বস্তু বা লক্ষ্যবস্তুর সঙ্গে প্রতিক্রিয়ার সঠিক বন্ধন সৃষ্টির কৌশলই হল শিখন।
2. এইচ পি স্মিথ : এর মতে, শিখন হল এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে অভিজ্ঞতার ফলে মানুষ নতুন আচরণ শিখে বা পুরনো আচরণকে আরও মজবুত বা দুর্বল করে।
3. ক্রো এবং ক্রো : এর মতে, শিখন হল এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে মানুষ অভ্যাস গড়ে তোলে, মনোভাব তৈরি করে এবং জ্ঞান অর্জন করে।
কার্যকরী সংজ্ঞা :
শিখন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে অতীত অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আচরণের পরিবর্তন ঘটে, যাতে মানুষ পরিবর্তিত পরিবেশের সঙ্গে সফলভাবে মানিয়ে নিতে পারে।
শিখনের বৈশিষ্ট্য :
1. বিকাশমূলক প্রক্রিয়া : শিখন মানে শুধু কোনো কাজ করার ক্ষমতা নয়। এটি এমন একটি বিকাশের প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে ব্যক্তি বা শিশুর আচরণ আরও উন্নত ও পরিণত হয়।
2. অভিজ্ঞতানির্ভর ও অভিযোজনমূলক : শিখনের মূল ভিত্তি অতীত অভিজ্ঞতা। মানুষ পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে। এইভাবে শিখন মানুষকে পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে চলতে ও নিজের আচরণে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনতে সাহায্য করে।
3. উদ্দেশ্যনির্ভর ও চাহিদামূলক : শিখনের মাধ্যমে মানুষ তার চাহিদা পূরণ করে। যেহেতু আমরা কোনো লক্ষ্য অর্জনের জন্য শিখি, তাই শিখন একটি উদ্দেশ্যমুখী প্রক্রিয়া।
4. অনুশীলননির্ভর : শিখনের জন্য অভিজ্ঞতার অনুশীলন করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনুশীলন যত বেশি করা হবে, শিখিত জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা তত দীর্ঘসময় ধরে মনে থাকবে এবং সহজে প্রয়োগ করা যাবে।
5. প্রেরণামূলক ও স্বেচ্ছাশীল : ব্যক্তির অভ্যন্তরীণ ইচ্ছা বা প্রেষণা তাকে কোনো কাজে উৎসাহী করে। এর ফলে মানুষ সক্রিয় হয়, নতুন আচরণ শেখার চেষ্টা করে এবং শিখন সম্ভব হয়।
6. নিরবচ্ছিন্ন : শিখনের প্রক্রিয়া শিশুর জন্মের পর শুরু হয় এবং জীবনজুড়ে চলতে থাকে। অর্থাৎ, মানুষ সারাজীবন নতুন কিছু শিখতে থাকে।
7. সঞ্চালনমূলক ও স্থায়ী পরিবর্তন : শিখনের মাধ্যমে অর্জিত অভিজ্ঞতা এক পরিস্থিতি থেকে অন্য পরিস্থিতিতে প্রয়োগ করা যায়। শিখনের ফলে শিক্ষার্থীদের আচরণ স্থায়ীভাবে পরিবর্তিত হয়।
8. সর্বজনীন : মানুষ ছাড়াও অন্যান্য প্রাণীরাও শিখনের মাধ্যমে পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে এবং তাদের অস্তিত্ব বজায় রাখতে পারে। তাই শিখন একটি সর্বজনীন প্রক্রিয়া।
9. আচরণ উন্নয়নমূলক : শিখনের ফলে মানুষের কাজ করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। পুরনো আচরণ যদি সমস্যার সমাধান বা পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে উপযুক্ত না হয়, তবে শিখনের মাধ্যমে তা পরিবর্তন করা হয়। এইভাবে আচরণ আরও উন্নত হয়।
সুতরাং, বলা যায় শিখন হলো একটি লক্ষ্যভিত্তিক, সচেতন এবং ব্যক্তির উপর নির্ভরশীল প্রক্রিয়া।
2. শিখন ও পরিণমনের মধ্যে সম্পর্ক কীরূপ?
অথবা,
শিক্ষাক্ষেত্রে পরিণমনের ভূমিকা আলোচনা করো। [HS-2016]
উত্তর : শিখন ও পরিণমন : শিখন হল অনুশীলন, অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রাণীর মানসিক ও বাহ্যিক আচরণের পরিবর্তন। এটি জন্মের পর শুরু হয়ে সারাজীবন চলতে থাকে। পরিণমন হল স্বাভাবিক জৈবিক বিকাশ, যেখানে জন্মগত সম্ভাবনা বিকশিত হয় এবং আচরণে পরিবর্তন আসে। এটি স্বতঃস্ফূর্ত ও শর্তবিহীন প্রক্রিয়া।
শিখন ও পরিণমনের সম্পর্ক :
1. পারস্পরিক সম্পর্ক :
i. শিখন ও পরিণমন দুইটি আলাদা প্রক্রিয়া।
ii. পরিণমন হলো স্বতঃস্ফূর্ত বিকাশ। অর্থাৎ এটি নিজের মতো করে ঘটে, শিখনের ওপর নির্ভর করে না।
iii. শিখন পরিণমনের উপর নির্ভর করে। শিশুর শিখন তখনই সম্ভব যখন তার বয়স বা মানসিক ও শারীরিক বিকাশ এমন পর্যায়ে পৌঁছে, যা নতুন জ্ঞান গ্রহণের উপযোগী।
2. বিকাশমূলক প্রক্রিয়া :
i. উভয়ই শিশুর বিকাশে ভূমিকা রাখে।
ii. পরিণমন শিশুর শারীরিক ও মানসিক ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
iii. শিখন সেই বিকাশকে কাজে লাগিয়ে নতুন দক্ষতা ও আচরণ শেখায়।
3. শিক্ষাবিদদের মতামত :
i. শিক্ষাবিদরা বলেন, শিশুকে নতুন কিছু শেখাতে হলে তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশ পর্যাপ্ত হতে হবে।
ii. অন্য কথায়, শিশু যদি পরিণমনের পর্যায়ে পৌঁছায়, তখন শিখন আরও ফলপ্রসূ হয়।
শিক্ষাক্ষেত্রে পরিণমনের ভূমিকা :
1. দৈহিক ও মানসিক প্রক্রিয়া : শিশুর শরীর ও মন বিকাশের মাধ্যমে তার পরিণমন প্রকাশ পায়। এতে শিশুর ভাষা ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিকাশ হয় এবং সে শিখতে সক্ষম হয়।
2. জীবনবিকাশ : শিক্ষার্থীর জীবনবিকাশের জন্য শিখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। শিখনের মাধ্যমে সে জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন করে। তবে শিখন কার্যকর হতে হলে শিক্ষার্থীর শারীরিক ও মানসিক পরিণমন হওয়া প্রয়োজন। পরিণমন না হলে শিখনের সঠিক ফল পাওয়া যায় না।
3. শিখনের গতি ও সীমা নির্ধারণ : শিশুর পরিণমন শিখনের গতি ও সীমা ঠিক করে। নির্দিষ্ট পর্যায়ের পর শিশুর শিখন শুরু হয় এবং নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত চলে। পরিণমন ঠিক করে কখন কোন ধরনের শিখন সফল হবে।
4. ভাষা বিকাশে পরিণমনের প্রভাব : শিক্ষার্থীর ভাষা বিকাশে পরিণমনের গুরুত্ব অনেক। যদি শিক্ষার্থীর উপযুক্ত পরিণমন না থাকে, তাহলে তার ভাষা বিকাশ ঠিকভাবে সম্ভব হয় না।
5. জ্ঞানেন্দ্রিয় ও কর্মেন্দ্রিয়ের সমন্বয় : শিক্ষার্থীর সঠিক বিকাশের উপর নির্ভর করে জ্ঞানেন্দ্রিয় ও কর্মেন্দ্রিয়ের সমন্বয় হয়। এটি শিক্ষার্থীকে যেকোনো বিষয় শিখতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
6. পরিণমনের ধরন নির্ধারণ : অনেক সময় শিখন পরিণমনের ধরন নির্ধারণ করে। যেমন - কিছু বিষয় অনুশীলনের মাধ্যমে শিশুর ইন্দ্রিয় সমূহকে উন্নত করা যায়। এই ক্ষেত্রে পরিণমন শিখন দ্বারা নির্ধারিত হয়।।
7. শিক্ষা পরিকল্পনা ও পরিণমনের সম্পর্ক : যদি সঠিক পরিণমন না ঘটে, তবে শিক্ষার্থীর পাঠগ্রহণে অসুবিধা হয়। তাই শিক্ষার পরিকল্পনা ও পাঠক্রম গঠন করতে হয় শিক্ষার্থীর পরিণমনের স্তর অনুযায়ী।
8. পরিণমনভিত্তিক পাঠক্রম ও শিক্ষাব্যবস্থা : শৈশব ও বয়ঃসন্ধি পর্যায়ে উপযুক্ত পাঠক্রম তৈরি করতে পরিণমনভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা প্রয়োজন।
6. মনোযোগের বিভাজন কাকে বলে ? শিক্ষাক্ষেত্রে মনোযোগের ভূমিকার মূল্যায়ন করো। [WBCHSE '17]
উত্তর : মনোযোগের বিভাজন : একই সময়ে একাধিক কাজ বা উদ্দীপকের প্রতি মনোযোগ দেওয়াকে মনোযোগের বিভাজন বলে। যেমন - কোনো বাসচালক গাড়ি চালানোর সঙ্গে সঙ্গে গান শুনছে কিংবা কোনো ছাত্র একদিকে অঙ্ক করছে, আবার সেই সময় গানও শুনছে । এই অবস্থায় মনোযোগ দুটি বা তার বেশি দিকে বিভক্ত থাকে। ফলে কোনো কাজেই পূর্ণ মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয় না।
শিক্ষাক্ষেত্রে মনোযোগের ভূমিকা ও শিক্ষকের দায়িত্ব :
1. ব্যক্তিগত পার্থক্য : মনোযোগের ক্ষেত্রে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর মধ্যে পার্থক্য থাকে। তাই শিক্ষককে ব্যক্তিগত বৈষম্যের নীতি মেনে পাঠ্যবিষয় নির্বাচন করতে হয়।
2. মনোযোগ আকর্ষণের উপকরণ : শিক্ষক শিক্ষার্থীর মনোযোগ আকর্ষণের জন্য বিভিন্ন নির্ধারক বা উপাদান ব্যবহার করেন। যেমন — রঙিন ও আকর্ষণীয় পাঠ্যপুস্তক, ছবি, চার্ট, মানচিত্র বা বিভিন্ন শিক্ষাসহায়ক উপকরণ ব্যবহার করলে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ে। এসব উপকরণ পাঠ্যবিষয়কে জীবন্ত ও বোধ্য করে তোলে, ফলে শিক্ষার্থীর মনোযোগ দীর্ঘ সময় ধরে বজায় থাকে।
3. শিক্ষার জন্য উন্নত পরিবেশ : সুন্দর, পরিচ্ছন্ন ও শান্ত পরিবেশ শিক্ষার্থীর মনোযোগ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই সুন্দর ও আকর্ষণীয় বিদ্যালয় পরিবেশ শিক্ষার্থীর মনোযোগ বাড়ায় এবং শিক্ষণ-শিখন প্রক্রিয়াকে ফলপ্রসূ করে।
4. ইচ্ছাসাপেক্ষ মনোযোগ ও শিক্ষা : শিক্ষককে এমনভাবে পাঠদান করতে হবে যাতে শিক্ষার্থীর মধ্যে শিখনের উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আগ্রহ ও অনুভূতি তৈরি হয়। প্রয়োজনে উপদেশ বা হালকা শাসনের মাধ্যমেও মনোযোগ আকর্ষণ করা যেতে পারে।
5. বিষয় বৈচিত্র্য : শিক্ষাদানের সময় পাঠ্যসূচির বিষয় একঘেয়ে বা কঠিন হলে, শিক্ষার্থীদের মনোযোগ কমে যায়। তাই শিক্ষক দীর্ঘ সময় একই বিষয় নিয়ে আলোচনা না করে মাঝে মাঝে পাঠের বিষয় পরিবর্তন করবেন। এতে শিক্ষার্থীর মনোযোগ বজায় থাকে এবং শিখন কার্যকর হয়।
6. প্রক্ষোভ ও আগ্রহের অনুসরণ : শিক্ষার্থীর কৌতূহল, আগ্রহ ও প্রবণতার দিকে লক্ষ্য রেখে পাঠদান করলে তারা বেশি মনোযোগী হয় এবং শিখন সফল হয়। শিক্ষার্থীর প্রক্ষোভ বা আগ্রহকে গুরুত্ব দেওয়াই মনোযোগ বৃদ্ধির অন্যতম উপায়।
7. বয়সভিত্তিক মনোযোগ : বয়সভিত্তিক মনোযোগ: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীর ইচ্ছাপ্রণোদিত মনোযোগ গড়ে ওঠে। তাই শিক্ষক শিক্ষার্থীদের বয়স ও মানসিক স্তর অনুযায়ী শিক্ষণ কৌশল ব্যবহার করবেন।
8. মনোযোগের ক্ষেত্রসীমা : শিশুর মনোযোগের সময় সীমিত। তাই পাঠ খুব দীর্ঘ না করে খণ্ড খণ্ডভাবে উপস্থাপন করা উচিত, যাতে তারা মনোযোগ ধরে রাখতে পারে।
উপসংহার : পরিশেষে বলা যায়, মনোযোগ শিক্ষণ-শিখনের মূল ভিত্তি। শিক্ষকের উচিত শিক্ষার্থীর শারীরিক ও মানসিক গঠন বুঝে এমন শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করা, যাতে তারা স্বাভাবিকভাবে পাঠে মনোযোগ দিতে পারে।
4. সক্রিয় বা অপারেন্ট অনুবর্তন কাকে বলে? সংক্ষেপে স্কিনার বক্সের পরীক্ষাটি বর্ণনা করো। [HS-2022, '17, '06, '05, '02)
উত্তর : অপারেন্ট অনুবর্তন : বিখ্যাত আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী বি.এফ. স্কিনার অপারেন্ট অনুবর্তনের স্রষ্টা। তিনি ১৯৩০ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশিত একটি পত্রিকায় এই ধারণাটি উপস্থাপন করেন।
অপারেন্ট অনুবর্তনের অর্থ :
“Operant” শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হলো ‘ফলোৎপাদনের জন্য প্রতিক্রিয়া’। স্কিনারের মতে, প্রতিক্রিয়া দেখানোর জন্য সবসময় উদ্দীপকের প্রয়োজন হয় না। যে অনুবর্তন প্রক্রিয়ায় কোনো উদ্দীপক ছাড়া প্রতিক্রিয়া সম্ভব হয় এবং যেখানে প্রাণীর সক্রিয়তা অপরিহার্য, তাকে সক্রিয় বা অপারেন্ট অনুবর্তন বলা হয়। যেমন — চাহিদা, আগ্রহ, তৃপ্তিদায়ক বা বেদনাদায়ক অনুভূতি প্রাণীর মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত আচরণ সৃষ্টি করে। এই আচরণই অপারেন্ট অনুবর্তনের মাধ্যমে ঘটে।
অপারেন্ট অনুবর্তন সংক্রান্ত স্কিনারের পরীক্ষা :
মনোবিজ্ঞানী স্কিনার অপারেন্ট অনুবর্তন (Operant Conditioning) পরীক্ষার জন্য স্কিনার বক্স, ক্ষুধার্ত ইঁদুর এবং খাদ্যবস্তু ব্যবহার করেছিলেন।
পরীক্ষা : স্কিনারের সক্রিয় অনুবর্তনের পরীক্ষার পর্যায়গুলি হল-
1. পরীক্ষার প্রথম পর্যায় : স্কিনার তাঁর তৈরি স্কিনার বক্স-এর মধ্যে পরীক্ষার জন্য প্রথমে একটি ক্ষুধার্ত ইঁদুরকে স্কিনার বক্সে ঢুকিয়ে দেন। বক্সের মধ্যে থাকা ট্রেতে আগে থেকেই খাবার রাখা থাকে। ইঁদুরটি খাবার খায় এবং পরীক্ষামূলক পরিবেশের সঙ্গে পরিচিত হয়ে যায়।
2. পরীক্ষার দ্বিতীয় পর্যায় : অন্য একদিন ইঁদুরটিকে বক্সে রাখার পর স্কিনার নিজেই লিভারে চাপ দিয়ে যান্ত্রিকভাবে ট্রেতে খাদ্য নিয়ে আসেন। এই সময় ইঁদুরের কোনো প্রচেষ্টা থাকে না। এভাবে ইঁদুরকে বক্সের পরিস্থিতি সঙ্গে পরিচিত করা হয়।
3. পরীক্ষার তৃতীয় পর্যায় : আবার অন্য একদিন ক্ষুধার্ত ইঁদুরটিকে বক্সে ঢোকানোর পর দেখা যায়, ইঁদুরটি খাবার খাওয়ার জন্য ট্রের দিকে দৌড়ে যায়, কিন্তু ট্রেতে কোনো খাদ্য নেই। এরপর ইঁদুরটি খাবার পাওয়ার জন্য বিভিন্ন প্রতিক্রিয়ামূলক আচরণ করে। এক সময় তার পা লিভারে পড়লে ট্রেতে খাদ্য আসে এবং ইঁদুরটি তা গ্রহণ করে।
4. পরীক্ষার চতুর্থ পর্যায় : এই পর্যায়ে স্কিনার ইঁদুরটিকে আবার বক্সে রাখেন এবং পরীক্ষা পুনরাবৃত্তি করেন। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, প্রতিবার লিভারে চাপ দিয়ে ট্রেতে খাদ্য আনার জন্য ইঁদুরের সময় ক্রমশ কমছে। এক সময় ইঁদুরটি বক্সে ঢুকার সঙ্গে সঙ্গে লিভারে চাপ দিয়ে ট্রেতে খাদ্য নিয়ে আসে এবং তা খায়। এইভাবে ইঁদুরটি খাদ্য পাওয়ার পদ্ধতি শিখে ফেলে।
সিদ্ধান্ত : উপরোক্ত পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে স্কিনার বুঝলেন যে প্রাণীর আচরণ দুই ধরনের - i. রেসপনডেন্ট আচরণ এবং ii. অপারেন্ট আচরণ ।
i. রেসপনডেন্ট আচরণ : যে আচরণসমূহ ইঁদুর করে, সেগুলি বিশেষ বস্তুধর্মী উদ্দীপক (যেমন : খাদ্য) দ্বারা উদ্ভূত হয়, তাকে রেসপনডেন্ট আচরণ বলা হয়। কারণ ইঁদুরের খাদ্য সম্পর্কে পূর্ব জ্ঞান থাকে।
ii. অপারেন্ট আচরণ : ইঁদুরের এমন আচরণও দেখা যায় যা বস্তুধর্মী উদ্দীপকের দ্বারা ঘটে না। পরীক্ষা চলাকালীন ইঁদুর কোনো খাবার দেখতে পায় না, তবুও কিছু আচরণ করে। এই আচরণ প্রত্যাশামূলক উদ্দীপকের কারণে ঘটে। স্কিনার এটিকেই অপারেন্ট আচরণ বলেছেন।
5. থর্নডাইকের শিখনের সূত্রগুলিকে কয়টি ভাগে ভাগ করা যায় ও কী কী? থর্নডাইকের শিখনের মুখ্য সূত্রগুলি লেখো। [HS - 2016, '12, '08]
উত্তর : থর্নডাইকের শিখনের সূত্র : আমেরিকান মনোবিজ্ঞানী এডওয়ার্ড লি থর্নডাইক তাঁর শিখনের সূত্রগুলিকে 3টি মুখ্য সূত্র ও 5টি গৌণ সূত্রে ভাগ করেছেন।
তিনটি মুখ্য সূত্রগুলি হল - i. প্রস্তুতির সূত্র , ii. অনুশীলনের সূত্র, iii. ফললাভের সূত্র
পাঁচটি গৌণ সূত্রগুলি হল - i. মানসিক প্রস্তুতির সূত্র ii. বহুমুখী প্রতিক্রিয়ার সূত্র iii. আংশিক প্রতিক্রিয়ার সূত্র, iv. উপমানের সূত্র, v. অনুষঙ্গমূলক সঞ্চালনের সূত্র
থর্নডাইকের শিখনের মুখ্য সূত্র :
1. প্রস্তুতির সূত্র : থর্নডাইক শিখনের মুখ্য সূত্রে বলছেন, কোনো কিছু শিখতে হলে মানুষের প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন। যদি কেউ শিখতে বা কাজ করতে প্রস্তুত থাকে, তাহলে সে তা করতে পছন্দ করবে এবং তৃপ্তি পাবে। আর যদি প্রস্তুতি না থাকে, জোর করে কিছু শেখালে বা করালে সে বিরক্ত হবে।
2. অনুশীলনের সূত্র : থর্নডাইক বলেন, কোনো উদ্দীপক এবং তার সাথে সংশ্লিষ্ট প্রতিক্রিয়ার মধ্যে শক্তিশালী সংযোগ গড়ে তুলতে বারবার অনুশীলন বা চর্চা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনুশীলনের সূত্রকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়- i. ব্যবহারের সূত্র, ii. অব্যবহারের সূত্র।
i. ব্যবহারের সূত্র : ব্যবহারের সূত্রে বলা হয়েছে, যদি উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার সংযোগ বারবার অনুশীলনের মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়, তখন সেই সংযোগ আরও শক্তিশালী হয়। অর্থাৎ, অনুশীলন যত বেশি, শিখনও তত বেশি দৃঢ় হয়।
ii. অব্যবহারের সূত্র : অব্যবহারের সূত্রে বলা হয়েছে, যদি উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার সংযোগ দীর্ঘ সময় ধরে অনুশীলন না করা হয়, তাহলে সেই সংযোগের শক্তি কমে যায়। ফলে শিখন দুর্বল হয়ে পড়ে এবং শিখিত বিষয় সহজে ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
3. ফললাভের সূত্র : থর্নডাইক বলেন, কোনো উদ্দীপক (S) এবং তার সঙ্গে সম্পর্কিত প্রতিক্রিয়া (R)-এর সংযোগ তখনই শক্তিশালী হয় যখন তার ফল শিক্ষার্থীর কাছে সুখকর বা আনন্দদায়ক হয়। অর্থাৎ S-R বন্ধন দৃঢ় হয়। অন্যদিকে, যদি ফলাফল অপ্রসন্ন বা বিরক্তিকর হয়, তবে সংযোগ দুর্বল হয়ে যায়।
🔹 লেখকের শেষ মন্তব্য :
'শিখন ও শিখন কৌশল' এই অধ্যায় থেকে আমাদের সাজেশন E-Book(PDF)গুলিতে আরো অনেকগুলি 10 নম্বর মানের ও 2 নম্বর মানের খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর আছে। সেগুলি পেতে হলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন অথবা উপরের Menu Option ক্লিক করে দেখতে পারেন।
File Details :
PDF Name : শিখন এবং শিখন কৌশল PDF
আরো পড়ুন | প্রশ্নোত্তর |
---|---|
1. ক্লাস 12 শিক্ষাবিজ্ঞান : মানসিক স্বাস্থ্য এবং কল্যাণ PDF | Click here |
2. ডাকঘর নাটকের প্রশ্ন উত্তর PDF | Click here |
3. পঞ্চম অধ্যায় : সমকালীন ভারতে নাগরিক.. PDF | Click here |
WB Semester Team
📞 & 💬 9883566115