ক্লাস 12 শিক্ষাবিজ্ঞান : মানসিক স্বাস্থ্য এবং কল্যাণ PDF
🔹 দ্বাদশ শ্রেণির চতুর্থ সেমিস্টার শিক্ষাবিজ্ঞান প্রশ্ন উত্তর PDF
1. মানসিক সুস্থতা বা মানসিক কল্যাণ কাকে বলে ? মানসিক সুস্থতার বিভিন্ন প্রকারগুলি বা ধরনগুলি লেখো। [HS Model Question]
উত্তর : মানসিক সুস্থতা : মানসিক সুস্থতা বলতে এমন এক অবস্থা বোঝায়, যেখানে একজন ব্যক্তি মানসিকভাবে ও আবেগগতভাবে ভালো থাকেন। তিনি মানসিক চাপ সামলাতে পারেন, ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলেন, জীবনের উদ্দেশ্য বুঝতে পারেন এবং নিজের ও সমাজের জীবন সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারেন। এখন নিচে মানসিক সুস্থতার বিভিন্ন প্রকারগুলি বা ধরনগুলি সম্পর্কে আলোচনা করছি -
মানসিক সুস্থতার ধরন :
মানসিক সুস্থতার কয়েকটি ভিন্ন ধরন রয়েছে সেগুলি হল -
1. আত্মপরিচয় : নিজের ক্ষমতা, দুর্বলতা এবং জীবনের সকল দিককে স্বীকার করা এবং সেগুলোকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে গ্রহণ করা।
2. ব্যক্তিগত উন্নতি : নিজের দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়ানোর প্রবণতা থাকা এবং নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য চেষ্টা করা।
3. আত্মনির্ভরশীলতা : অন্যের মতামতের প্রভাব না নিয়ে নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেওয়ার ক্ষমতা থাকা। এটি ব্যক্তির আত্মনির্ভরশীলতা এবং আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে।
4. লক্ষ্য নির্ধারণ : জীবনের জন্য একটি স্পষ্ট লক্ষ্য ঠিক করা এবং সেই লক্ষ্য পূরণের চেষ্টা করা।
5. পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ : নিজের জীবন এবং চারপাশের পরিবেশের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখা এবং সেগুলি সঠিকভাবে পরিচালনা করার দক্ষতা থাকা।
6. ইতিবাচক সম্পর্ক : পরিবার, বন্ধু এবং সমাজের সঙ্গে সুস্থ, শক্তিশালী ও ইতিবাচক সম্পর্ক বজায় রাখা। এটি ব্যক্তির সামাজিক দক্ষতা ও মানসিক সুস্থতা উন্নত করে।
2. মননশীল ধ্যান কীভাবে মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে সাহায্য করে ?
অথবা,
মানব কল্যাণে ধ্যানের ভূমিকা কী ? [HS Model Question]
উত্তর : মননশীল ধ্যান হলো এমন একটি কৌশল যা শরীর এবং মনকে সুস্থ রাখে। এটি মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে এবং বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যা কমাতে কার্যকর। মননশীল ধ্যান কীভাবে মানসিক সুস্থতা বজায় রাখে তা নিচে আলোচনা করছি -
মনস্তাত্ত্বিক সুস্থতায় মননশীল ধ্যানের গুরুত্ব আলোচনা করা হল -
1. মন শান্ত করা : মননশীল ধ্যান মনকে একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে কেন্দ্রীভূত করতে সাহায্য করে। এটি মনকে শান্ত রাখে এবং মানসিক অস্থিরতা কমায়।
2. চাপ কমানো : মননশীল ধ্যান শরীরকে শিথিল করে এবং মানসিক চাপ কমায়। এর ফলে স্ট্রেস হরমোনের উৎপাদন কমে এবং মনে শান্তি এবং স্থিতিশীলতার অনুভূতি তৈরি হয়।
3. দৃষ্টিভঙ্গির উন্নতি : মননশীল ধ্যান দৈহিক ও মানসিক সমস্যাগুলোকে বাইরে থেকে দেখতে সাহায্য করে এবং সেগুলো সম্পর্কে ইতিবাচকভাবে চিন্তা করতে শেখায়।
4. মানসিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি : মননশীল ধ্যান মানসিক স্থিরতা তৈরি করতে এবং তা বজায় রাখতে সাহায্য করে। এটি ব্যক্তিকে সঠিক পরিস্থিতিতে ও কর্তব্যে অনড় থাকতে সাহায্য করে এবং জীবনের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও বিপদ মোকাবিলা করতে সক্ষম করে।
5. আত্মসচেতনতা বৃদ্ধি : মননশীল ধ্যান মননশীলতা বাড়ানোর একটি ভালো উপায়। এর ফলে ব্যক্তি নিজের চিন্তাভাবনা, অনুভূতি ও আবেগ সম্পর্কে সচেতন হয় এবং অন্যের আবেগকেও গুরুত্ব দিতে শেখে।
6. সম্পর্ক উন্নতি : ধ্যান আত্মসচেতনতা ও অন্যের আবেগ বোঝার ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। ফলে মানুষের মধ্যে যোগাযোগ ও পারস্পরিক গ্রহণযোগ্যতা বাড়ে।
7. উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণ : নিয়মিত ধ্যান মানসিক উদ্বেগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। এতে মানসিক চাপ কমে এবং নিয়ন্ত্রণে থাকে।
3. অপসংগতি কী ? অপসংগতির কয়েকটি শর্ত লেখো। [HS Model Question 24]
উত্তর : অপসংগতি : যদি শিক্ষার্থী বা ব্যক্তির দৈহিক ও মানসিক চাহিদা ঠিকমতো পূরণ না হয়, তবে তার মধ্যে মানসিক দ্বন্দ্ব ও প্রক্ষোভমূলক অসংগতি দেখা দিতে পারে। এটি তার বাহ্যিক আচরণকে প্রভাবিত করে এবং ব্যক্তি বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত ও অসামাজিক কাজ করতে পারে। একেই বলে অপসংগতি। এখন নিচে অপসংগতির কয়েকটি শর্ত সম্পর্কে আলোচনা করছি -
অপসংগতির কয়েকটি শর্ত :
1. নিরাপত্তার অভাব : যদি মা, বাবা, শিক্ষক বা অন্যরা শিক্ষার্থী বা ব্যক্তির সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করে, তাহলে সে নিজেকে অবাঞ্ছিত মনে করতে পারে। এতে তার মধ্যে নিরাপত্তার অভাব তৈরি হয় এবং অপসংগতিমূলক আচরণ দেখা দেয়।
2. মানসিক দ্বন্দ্ব : পরস্পরবিরোধী মানসিক ইচ্ছার কারণে শিক্ষার্থী বা ব্যক্তির মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। যদি এই দ্বন্দ্ব সুষ্ঠুভাবে সমাধান না হয়, তবে তার মধ্যে অপসংগতি দেখা দেয়।
3. অপরাধবোধ : কখনও কখনও শিক্ষার্থী বা ব্যক্তি নিজের অসামাজিক আচরণের জন্য নিজেকে দায়ী মনে করে। এই অপরাধবোধের কারণে সে সংকুচিত হয়ে যায় এবং তার মধ্যে অপসংগতিমূলক আচরণ দেখা দেয়।
4. বিদ্যালয়-সংক্রান্ত কারণ : অস্বাস্থ্যকর বিদ্যালয় পরিবেশ, শিক্ষকের অতিরিক্ত শাসন, জটিল পাঠক্রম বা বিদ্যালয়ে খেলাধুলার সুযোগের অভাবের মতো কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অপসংগতি দেখা দিতে পারে।
5. আক্রমণাত্মক মনোভাব : স্বাভাবিক প্রবণতা ও বিভিন্ন নেতিবাচক অভিজ্ঞতার কারণে ব্যক্তির মধ্যে আক্রমণাত্মক মনোভাব জন্মায়। এর ফলে তার মধ্যে অপসংগতিমূলক আচরণ দেখা দিতে পারে।
4. শ্রেণিকক্ষে জীবন দক্ষতা শিক্ষা গড়ে তোলার জন্য ব্যবহৃত কয়েকটি কার্যাবলি সম্পর্কে লেখো।
উত্তর : জীবন দক্ষতা : জীবন দক্ষতা হলো এমন ক্ষমতা যা মানুষকে পরিবর্তিত পরিবেশ ও পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে চলতে সাহায্য করে। এটি ইতিবাচকভাবে আচরণ করতে, সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে এবং অন্যের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়তে সহায়তা করে।
শ্রেণিকক্ষে জীবন দক্ষতা গড়ে তোলার কার্যকলাপ :
শ্রেণিকক্ষে বিভিন্ন কার্যকলাপ শিক্ষার্থীদের জীবন দক্ষতা বিকাশে সহায়ক। এর মধ্যে প্রধান কিছু হল -
1. ব্রেনস্টর্মিং : এটি জীবন দক্ষতা গড়ে তোলার জন্য খুব প্রয়োজন। কারণ ব্রেনস্টর্মিং শিক্ষার্থীদের নতুন ধারণা দ্রুত ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে তৈরি করতে সাহায্য করে। দলগত আলোচনার মাধ্যমে সৃজনশীল চিন্তাভাবনা বিকশিত হয় এবং তা মূল্যায়ন করা যায়।
2. শ্রেণিকক্ষে আলোচনা : শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিষয় শিখতে ও অনুশীলন করতে পারে। এতে তাদের শোনা, বলা, মতামত দেওয়া এবং সহানুভূতিশীল আচরণের দক্ষতা বাড়ে। এগুলো জীবন দক্ষতা শেখার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
3. চরিত্র অনুকরণ (Role Play) : এতে শিক্ষার্থীরা জীবনের বিভিন্ন পরিস্থিতিতে কিভাবে চলতে হবে তা শিখে। শ্রেণিকক্ষে মজার বা বাস্তব জীবনের ঘটনা অনুকরণ করতে তাদের একে অপরের সঙ্গে সহযোগিতা করতে হয়। Role Play মানে হলো অন্য কারও চরিত্র বা আচরণ অনুকরণ করা।
4. বিতর্ক : বিতর্কে শিক্ষার্থীরা স্বাস্থ্য, সমাজ, পরিবেশ ও সংস্কৃতি সম্পর্কে নতুন তথ্য ও অভিজ্ঞতা পায়। এটি জীবন দক্ষতা শিখতে সাহায্য করে।
5. গল্প বলার অনুশীলন : গল্প বলা জীবন দক্ষতা শেখার একটি ভালো উপায়। কারণ এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা খুঁটিনাটি ভাবনা, সৃজনশীলতা এবং গল্প তৈরির দক্ষতা বাড়ায়।
5. WHO-এর মতে, স্বাস্থ্য কী ? দৈনন্দিন জীবনে মানসিক স্বাস্থ্যের সুস্থতার সুরক্ষায় কী কী করণীয় হওয়া উচিত ?
উত্তর : বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর মতে, স্বাস্থ্য মানে শুধু রোগ বা দুর্বলতা না থাকা নয়। এটি এমন এক অবস্থা যেখানে মানুষ শারীরিক, মানসিক ও সামাজিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ থাকে। এখন নিচে দৈনন্দিন জীবনে মানসিক স্বাস্থ্যের সুস্থতার সুরক্ষায় কী কী করণীয় সম্পর্কে আলোচনা করছি -
মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার উপায় :
মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে নিচের বিষয়গুলি অনুসরণ করা দরকার -
1. পর্যাপ্ত ঘুমের প্রয়োজনীয়তা : ঘুম শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুব জরুরি। ঠিকমতো না ঘুমালে হতাশা, উদ্বেগ ও দুঃখবোধের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
2. নিয়মিত শরীরচর্চা করা : প্রতিদিন শরীরচর্চা বা খেলাধুলা করা শরীর ও মন দুটোকেই সক্রিয় ও সতেজ রাখে। এতে শরীরে রক্তসঞ্চালন ঠিক থাকে, শক্তি বাড়ে এবং মন প্রফুল্ল থাকে। নিয়মিত ব্যায়াম দুশ্চিন্তা, ক্লান্তি ও মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। তাই মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে শরীরচর্চা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
3. সুষম আহারের গুরুত্ব : ভালো পুষ্টির খাবার শরীর ও মন দুটোই সুস্থ রাখে। এতে শরীর শক্তিশালী হয় এবং মস্তিষ্ক সচল থাকে। ভিটামিন ও আয়রন মন ও মেজাজ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
4. মাদক ও ধূমপান থেকে দূরে থাকা : মাদক ও ধূমপান মস্তিষ্কের কাজের ক্ষতি করে এবং নানা রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। দীর্ঘদিন মাদক বা ধূমপান করলে বিষণ্ণতা, উদ্বেগ, নিদ্রাহীনতা ও নানা জটিল রোগের আশঙ্কা বাড়ে। তাই মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য এগুলো থেকে দূরে থাকা দরকার।
5. আত্মসক্রিয় থাকা : আলস্য না করে বন্ধু, আত্মীয় বা প্রতিবেশীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, হাঁটতে বের হওয়া বা পাঠাগারে যাওয়া মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে।
6. শৃঙ্খলিত জীবনযাপনের প্রয়োজন : নিয়মিত ও শৃঙ্খলাবদ্ধ জীবনযাপন শরীর ও মন দুটোকেই সুস্থ রাখে। এর কোনো বিকল্প নেই।
🔹 লেখকের শেষ মন্তব্য :
দ্বাদশ শ্রেণির চতুর্থ সেমিস্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান সাজেশন E-Bookটি সংগ্রহ করতে WB Semester Team এর সঙ্গে যোগাযোগ করুন এবং সাজেশন E-Bookগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে Meno Option ক্লিক করুন।
File Details :
PDF Name : মানসিক স্বাস্থ্য এবং কল্যাণ ক্লাস 12 PDF
আরো পড়ুন | প্রশ্নোত্তর |
---|---|
1. ডাকঘর নাটকের প্রশ্ন উত্তর PDF | Click here |
2. পঞ্চম অধ্যায় : সমকালীন ভারতে নাগরিক.. PDF | Click here |
WB Semester Team
📞 & 💬 9883566115