তিমির হননের গান কবিতার প্রশ্ন উত্তর PDF
🔹 'তিমির হননের গান' কবিতার প্রশ্ন উত্তর
[প্রতিটি প্রশ্নের মান-5]1. 'তিমিরহননের গান' কবিতাটি কোন্ প্রেক্ষাপটে লেখা ? কবি কেন 'তিমিরবিলাসী' নয়, 'তিমিরবিনাশী' হতে চেয়েছেন ? [HS WBCHSE Model Question] ২+৩
উত্তর : বাংলা সাহিত্যের কবি জীবনানন্দ দাশের লেখা 'সাতটি তারার তিমির' কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত 'তিমিরহননের গান' কবিতা থেকে উক্ত প্রশ্নটি নেওয়া হয়েছে।
কবিতাটির প্রেক্ষাপট : বাংলার সমাজজীবনে ১৩৫০ বঙ্গাব্দের মন্বন্তর ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলেছিল। গ্রাম থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ শহরে এসে ভিখারিতে রূপান্তরিত হয়েছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বাঙালি সমাজে মূল্যবোধের অভাব, যান্ত্রিক জীবনযাপন, ক্লান্তি ও হতাশা ছড়িয়ে পড়েছিল। দুর্ভিক্ষের কারণে ব্যক্তির সমস্যা আরও বড় হয়ে সামাজিক সংকটের ভয়ঙ্কর ছবি তৈরি করেছিল। মধ্যবিত্তের ব্যক্তিসংকটের থেকেও, তার জীবনের ব্যাপ্ত বিষণ্ণতার থেকেও 'আরো বেশি কালো-কালো ছায়া' ভিড় করে শহরের রাজপথে। কবি জীবনানন্দ দাশ এই প্রেক্ষাপটে 'তিমিরহননের গান' কবিতাটি রচনা করেছেন।
'তিমিরবিলাসী' নয়, 'তিমিরবিনাশী' হওয়ার কারণ : সমস্ত কষ্ট, ব্যক্তিগত বিচ্ছিন্নতা ও হতাশার মধ্যে জীবনানন্দ শেষ পর্যন্ত স্থিত হতে চেয়েছেন অমলিন আশাবাদের। দৃঢ় বিশ্বাসে অনুপ্রাণিত কবি মানুষের মনের বিশ্বাস ও অনুভূতির উপর ভরসা করেছেন। - "আমরা তো তিমিরবিনাশী/হতে চাই।/আমরা তো তিমিরবিনাশী।” প্রথমে তিমিরবিনাশী হওয়ার ইচ্ছা থাকলেও শেষ পঙ্ক্তিতে তা প্রত্যয়ে রূপান্তরিত হয়েছে এবং কবি জানিয়ে দিয়েছেন "আমরা তো তিমিরবিনাশী।” কোনো সন্দেহ নেই। সর্বমানবের হয়ে কবির এই কথা। গভীর অন্ধকারেও এটি মানবতার এক দৃঢ় অঙ্গীকার।
2. “সূর্যালোক নেই-তবুー/সূর্যালোক মনোরম মনে হ’লে হাসি।” -‘সূর্যালোক নেই’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ? কবি মন্তব্যটির মধ্য দিয়ে কী বোঝাতে চেয়েছেন ? ২+৩
উত্তর : বাংলা সাহিত্যের কবি জীবনানন্দ দাশের লেখা 'সাতটি তারার তিমির' কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত 'তিমিরহননের গান' কবিতা থেকে উদ্ধৃতাংশটি নেওয়া হয়েছে।
‘সূর্যালোক নেই’ : এই কবিতায় দেখা যায় যন্ত্রনির্ভর শহরে জীবনে মানুষের বেঁচে থাকা অর্থহীন হয়ে পড়েছে। একসময় প্রকৃতির কোলে যে মানুষের জীবন ছিল শান্ত ও স্বাভাবিক, এখন সেই জীবন প্রায় হারিয়ে গেছে। সমাজবদ্ধ হওয়ার প্রথম পর্বে প্রকৃতির কাছ থেকে মানুষ শিখেছিল জীবনের সহজগতি। তাকে ভেবেছিল অনায়াস গ্লানিহীন স্মরণীয় উত্তরাধিকার। জীবনের হাসি-খেলা-ভালোবাসার মধ্যে ছিল তার অনায়াস উদ্যাপন। ‘সূর্যালোক নেই’ বলতে বোঝানো হয়েছে যে নাগরিক জীবনে স্বাভাবিক ও আনন্দময় জীবনের আলো আর নেই; সেই সহজ, উজ্জ্বল জীবন এখন হারিয়ে গেছে।
মন্তব্যটির অর্থ : শহরের মানুষ এখন ক্লান্ত, অবসন্ন আর ভিতর থেকে শূন্য। যে প্রকৃতির সান্নিধ্য একদিন তার জীবনকে স্বচ্ছন্দ ও গতিশীল করেছিল, জীবনযাপনের সেই সব রীতি এখন ‘মৃতের চোখের মতো’। চারপাশে কোনো আলো নেই, তাই সে আলো খোঁজে দূরের নক্ষত্রে। যে জীবন হেমন্তের প্রান্তরের মতো সর্বরিক্ত সেখানে তারার আলোর খোঁজ চলে। এই অন্ধকার ও ক্লান্ত জীবনে মানুষ অতীতের আলোয় ফিরে যেতে চায়। সূর্যালোক না থাকলেও মনোরম সূর্যালোকের কথা ভেবে অবসন্ন মানুষ জীবনে একটু হাসির আলো খুঁজে পেতে চায়।
3. "আমরা বেদনাহীন-অন্তহীন বেদনার পথে।" -'আমরা' বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে ? কেন তারা 'বেদনাহীন-অন্তহীন বেদনার পথে'? ১+৪
উত্তর : বাংলা সাহিত্যের কবি জীবনানন্দ দাশের লেখা 'সাতটি তারার তিমির' কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত 'তিমিরহননের গান' কবিতা থেকে উদ্ধৃতাংশটি নেওয়া হয়েছে।
এখানে 'আমরা' বলতে নাগরিক মধ্যবিত্ত সমাজের কথা বলা হয়েছে।
তারা 'বেদনাহীন-অন্তহীন বেদনার পথে : নগরসভ্যতা গড়ে ওঠার পর থেকেই মানুষ ধীরে ধীরে প্রকৃতি থেকে দূরে সরে যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে আসে ব্যক্তিক বিচ্ছিন্নতা। মূল্যবোধ হারানো, যান্ত্রিক জীবনের ক্লান্তি, হতাশায় মানুষ নির্মল সম্পর্ক ও জীবনের সহজ আনন্দ ইত্যাদি বিগত দিনের স্মৃতি হয়ে যায়। "সেই সব রীতি আজ মৃতের চোখের মতো তবু- "এরই মধ্যে মিথ্যা সান্ত্বনা খুঁজে নিতে চায় অবসন্ন মধ্যবিত্ত। শূন্য হেমন্তে মানুষ তারার আলো খোঁজে। দুর্ভিক্ষ বেড়ে গেলে সময়ের সংকট তীব্র হয়, তবুও মধ্যবিত্ত সমাজ লঙ্গরখানায় লাইনে দাঁড়ানো বা ফুটপাতে মৃত্যুর দৃশ্যেও বিচলিত হয় না। সীমাহীন নেতির সামনে সে হাসে, এটিকে 'সূর্যালোক প্রজ্ঞাময়' মনে করে। 'অন্তহীন বেদনার পথে'-ও এই 'মধ্যবিত্তমদির জগতে' নাগরিক মানুষ বেদনাহীন হয়ে থাকে, যা আসলে তার আত্মপ্রতারণা, সত্যবিমুখতা এবং সমাজবিচ্ছিন্নতার চিহ্ন হয়ে থাকে।
4. "স্বতই বিমর্ষ হয়ে ভদ্র সাধারণ/চেয়ে দ্যাখে...." - এখানে 'ভদ্র সাধারণ' বলতে কাদের কথা বলা হয়েছে? তাদের বিমর্ষতার কারণ কী? তারা কী দেখে ? ১+২+২
উত্তর : বাংলা সাহিত্যের কবি জীবনানন্দ দাশের লেখা 'সাতটি তারার তিমির' কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত 'তিমিরহননের গান' কবিতা থেকে উদ্ধৃতাংশটি নেওয়া হয়েছে।
এখানে 'ভদ্র সাধারণ' বলতে মধ্যবিত্ত নাগরিক সমাজের কথা বলা হয়েছে।
তাদের বিমর্ষতার কারণ : নগরজীবনের জটিলতা এবং যান্ত্রিকতা মানুষের প্রকৃতির সঙ্গে স্থায়ী বিচ্ছেদ ঘটিয়েছে। একসময় প্রকৃতির আশ্রয়ে মানুষ জীবনের আনন্দ ও সমৃদ্ধি পেয়েছিল। পরবর্তীতে নগরসভ্যতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মানুষদের বিচ্ছেদ ঘটে যায়। জীবনের সেই সহজ আনন্দ, যা মানুষ প্রকৃতির কাছ থেকে শিখেছিল, তার অভাবে মানুষের জীবন আলোহীন হয়ে যায় । মানুষ কৃত্রিম জীবনে কৃত্রিমভাবে আনন্দ খোঁজে , যার ফলে পুরো মানবসমাজ বিষণ্ণতা ও বিমর্ষতায় ঘিরে যায়।
বিমর্ষ মধ্যবিত্ত এক অশান্ত সময়ে আরও গভীর বিষণ্ণতার ছবি দেখতে পায়।"... সেই বিষাদের চেয়ে/আরো বেশি কালো-কালো ছায়া"। দুর্ভিক্ষে ছিন্নমূল গ্রামের মানুষ শহরে ভিড় করে, খাবারের জন্য লঙ্গরখানায় লাইন দেয় এবং নর্দমা থেকে ওভারব্রিজ-এইসব স্থান মানুষগুলোর ঠিকানা হয়। এইসব মানুষেরা তারাভরা আকাশের নীচে ঘুমিয়ে পড়ে কিংবা মরে যায়। এই ভয়ঙ্কর বিষণ্ণতা মধ্যবিত্ত মানুষের নিজের বেদনা ও হতাশাকে ছাপিয়ে যায়।
5. "মহানগরীর মৃগনাভি ভালোবাসি।"- কারা এ কথা বলেছে? এখানে যে মনোভাবের প্রকাশ ঘটেছে নিজের ভাষায় লেখ। ২+৩
উত্তর : বাংলা সাহিত্যের কবি জীবনানন্দ দাশের লেখা 'সাতটি তারার তিমির' কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত 'তিমিরহননের গান' কবিতা থেকে উদ্ধৃতাংশটি নেওয়া হয়েছে।
উদ্ধৃতাংশটিতে নাগরিক মধ্যবিত্ত সমাজের মনোভাব প্রকাশিত হয়েছে।
একসময় প্রকৃতির কাছ থেকে পাওয়া সহজ ও নির্মল জীবন, নগরজীবনের জটিলতা ও যান্ত্রিকতায় মধ্যবিত্ত মানুষের জীবন থেকে হারিয়ে গেছে। নিরালোক জীবনে বিমর্ষতাই একমাত্র সত্য। কিন্তু সেই ব্যক্তিগত বিষণ্ণতাকে ছাপিয়ে যায় ঘনিয়ে আসা সামাজিক অন্ধকার। দুর্ভিক্ষের কষ্টে মানুষ শহরের রাস্তায় জড়ো হয়ে আসে। খাবারের জন্য তারা লঙ্গরখানায় লাইন দেয়, আর নর্দমা থেকে শূন্য ওভারব্রিজ তাদের আশ্রয় হয়ে ওঠে। ফুটপাতে তারা ঘুমায় এবং একসময় মরে যায়। কিন্তু জীবনের এই 'অন্তহীন বেদনার পথ' মধ্যবিত্তকে স্পর্শ করতে পারে না। তারা নিজেদের ভালো থাকার জন্য নিজেকে প্রতারণার একটি চক্রে বাঁধে। সেখানে কোনো সূর্যালোক না থাকলেও তাকে প্রজ্ঞাময় মনে করে হেসে যায়। মহানগর তাদের কাছে জীবিত হোক বা মৃত, তবুও তারা তার থেকে সুগন্ধ খুঁজে নিতে থাকে এবং তাদের জীবনকে এক ভয়ঙ্কর আত্মরতি ঘিরে থাকে।
🔹 লেখকের শেষ মন্তব্য :
WB Semester Team প্রকাশিত দ্বাদশ শ্রেণীর চতুর্থ সেমিস্টার সাজেশন ই-বুকগুলি (PDF) সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের ওয়েবসাইটের উপরের Menu অপশনে ক্লিক করুন। এই ই-বুক(PDF)গুলিতে নতুন সিলেবাসের প্রতিটি অধ্যায় থেকে খুব সুন্দর করে গুছিয়ে প্রশ্ন উত্তরগুলি উপস্থাপন করা হয়েছে। উপরের প্রশ্ন-উত্তর গুলি যদি আপনাদের কাজে লাগে, তবেই আমাদের এই পরিশ্রম সার্থক হবে।
File Details :
PDF Name : 'তিমিরহননের গান' কবিতার প্রশ্ন উত্তর PDF
Size : 1.1 mb
No. of Pages : 2
Download Link : Click here To Download
আরো পড়ুন | প্রশ্নোত্তর |
---|---|
4. 'কেন এল না' কবিতার প্রশ্ন উত্তর PDF | Click here |
1. প্রার্থনা কবিতার প্রশ্ন উত্তর PDF | Click here |
2. 'Three Questions' গল্পের প্রশ্ন উত্তর PDF | Click here |
3. হারুন সালেমের মাসি গল্পের প্রশ্ন উত্তর PDF | Click here |
WB Semester Team
📞 & 💬 9883566115