🔹 Class 12 4th Semester Bengali Question Answer
1. 'হারুন সালেমের মাসি' গল্প অনুসরণ করে গৌরবির মাতৃরূপের পরিচয় দাও।
অথবা, মাতৃত্বের কাছে জাতপাতের সংস্কার কীভাবে অর্থহীন হয়ে যায়, 'হারুন সালেমের মাসি' গল্পটি থেকে তার পরিচয় দাও।
অথবা, 'হারুন সালেমের মাসি' গল্প অবলম্বনে বুঝিয়ে দাও যে জাতপাতের চেয়ে স্নেহ-ধর্মের আবেদন মানুষকে সাহসী করে।
উত্তর : মহাশ্বেতা দেবীর ‘হারুন সালেমের মাসি’ গল্পে লেখিকা দেখিয়েছেন, মানুষের পরিচয় জাতি বা ধর্ম নয়, আসল পরিচয় মানবতা ও মাতৃত্বে। গৌরবি এই গল্পে এমন এক নারী, যিনি মাতৃত্বের গৌরবে সব ভেদাভেদ ভুলে এক অসহায় মুসলমান শিশুর মা হয়ে ওঠেন। গৌরবি সেই মাতৃত্বের প্রতীক, যে ভালোবাসা দিয়ে প্রমাণ করে মানুষ হওয়াই সবচেয়ে বড় পরিচয়।
(ক) গৌরবির মাতৃরূপ : গৌরবি ছিল এক গরিব, খোঁড়া, একলা নারী। জলাজঙ্গল থেকে শাকপাতা তুলে বিক্রি করেই তার জীবিকা চলত। নিজের সন্তানদের অবহেলায় সে নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করত। একদিন মা-হারা মুসলমান শিশু হারা তার জীবনে আশ্রয় চায়। শুরুতে গৌরবি কেবল সহানুভূতি দেখালেও ধীরে ধীরে হারার প্রতি তার মমতা গভীর হয়ে ওঠে। সে হারাকে খাওয়ায়, ঘুম পাড়ায়, ভয় পেলে সান্ত্বনা দেয় যেন সে নিজের সন্তান। গৌরবির মমতায় ধর্ম ও জাতির সীমা ভেঙে যায়, ফুটে ওঠে এক নিঃস্বার্থ মাতৃত্বের রূপ।
(খ) মাতৃত্বের কাছে জাতপাত অর্থহীন : সমাজের নিয়মে মুসলমান ছেলেকে আশ্রয় দেওয়া ছিল অগ্রহণযোগ্য, তবু গৌরবি তা অমান্য করে। যখন সবাই হারাকে শরণার্থী শিবিরে পাঠাতে চায়, সে প্রতিবাদ করে। হারাকে ছেড়ে সে বাঁচতে পারে না বুঝে গৌরবি সমাজ, সন্তান ও নিরাপত্তা সব ছেড়ে হারাকে নিয়ে শহরের পথে বেরিয়ে পড়ে। শহরের জনসমুদ্রে মিশে গিয়ে সে চায় জাতপাতের সব সীমা মুছে ফেলতে। মাতৃত্বের টানে সে হয়ে ওঠে সাহসী ও প্রতিবাদী। তার এই ত্যাগেই প্রমাণিত হয় মাতৃত্বের সামনে জাতপাতের সব সংস্কার অর্থহীন।
উপসংহার : গৌরবি প্রমাণ করে যে, মাতৃত্বই মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম। জাতপাতের ভেদাভেদ মাতৃত্বের কাছে তুচ্ছ। তাই ‘হারুন সালেমের মাসি’ গল্পে গৌরবি হয়ে ওঠে মানবতার প্রতীক। একজন মা, যিনি ভালোবাসার শক্তিতে সমাজের সব সংস্কার ভেঙে দেন।
2. 'হারুন সালেমের মাসি' গল্প অবলম্বনে হারা ও গৌরবির সম্পর্কের মূল্যায়ন করো।
উত্তর : বাংলা সাহিত্যের কথাসাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীর ‘হারুন সালেমের মাসি’ গল্পে হারা ও গৌরবির সম্পর্ক মানবতার শ্রেষ্ঠ দৃষ্টান্ত। জাতপাত ও ধর্মের সীমানা পেরিয়ে তাদের মধ্যে জন্ম নেয় এক নিখাদ মাতৃত্বের বন্ধন, যা সমাজের ভেদাভেদকে অতিক্রম করে ভালোবাসার জয় ঘোষণা করে।
হারা ও গৌরবির সম্পর্ক মূল্যায়ন :
(ক) সম্পর্কের সূত্রপাত : হারা এক মাতৃহারা, জড়বুদ্ধি মুসলমান বালক। ঘটনাচক্রে তার মায়ের সহকর্মী গৌরবির কাছে আশ্রয় নেয়, এবং পরিচয়ের সূত্রে তাকে ‘মাসি’ বলে ডাকে। এখান থেকেই তাদের সম্পর্কের সূচনা হয়।
(খ) মাতৃত্বের বিকাশ : নিজের সন্তানদের অবহেলায় দুঃখিত গৌরবি হারার মধ্যে তার অতৃপ্ত মাতৃত্বের তৃপ্তি খুঁজে পায়। অপরদিকে হারা গৌরবির মধ্যে হারানো মাকে পেয়ে যায়। তারা অজান্তেই মা-ছেলে হয়ে ওঠে।
(গ) গৌরবির দ্বিধা ও সমাজের বাধা : গৌরবি হারাকে আশ্রয় দিয়ে আর্থিক ও সামাজিক দুই সংকটেই পড়ে। একদিকে তার নিজের জীবিকা কষ্টকর, অন্যদিকে সমাজে এক হিন্দু নারীর ঘরে মুসলমান বালকের থাকা অসম্মানজনক বলে মনে করা হয়।
(ঘ) সমাজের বাধা ও প্রতিবাদ : সমাজে এক হিন্দু নারীর ঘরে মুসলমান শিশুর থাকা মেনে নেওয়া হয়নি। গৌরবি সমাজের চাপ অগ্রাহ্য করে হারার পাশে থেকে মাতৃত্বের মর্যাদা রক্ষা করে, এই প্রতিবাদেই তার মানবিক শক্তির প্রকাশ ঘটে।
(ঙ) মানবতার জয় : শেষে গৌরবি হারাকে নিয়ে সমাজ ত্যাগ করে শহরের দিকে পা বাড়ায়। জাতপাতের ভেদাভেদ ভুলে তারা এক নতুন জীবনের পথে পা রাখে। তাদের সম্পর্কের মাধ্যমে লেখিকা মানবতার জয় ঘোষণা করেছেন।
উপসংহার : তাই আলোচনার শেষে বলতে পারি, এই গল্পে হারা ও গৌরবির সম্পর্ক শুধু মা-ছেলের নয়, বরং ভালোবাসা ও মানবতার প্রতীক। ধর্ম-জাতের ভেদ ভুলিয়ে এই সম্পর্ক প্রমাণ করে মাতৃত্বই মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ বন্ধন।
3. "শহরে গৌরবির আর হারার সমাজ অনেক বড়ো। সমুদ্রের মতো।"- গৌরবির আর হারার সমাজের পরিচয় দাও। শহরে তা 'সমুদ্রের মতো' কেন ?
উত্তর : বাংলা সাহিত্যের কথাসাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীর লেখা 'হারুন সালেমের মাসি’ গল্প থেকে প্রশ্নটি নেওয়া হয়েছে। এই গল্পে সমাজের বাস্তব চিত্র অত্যন্ত নিখুঁতভাবে ফুটে উঠেছে। গৌরবি ও হারার জীবনযাত্রার মধ্যে আমরা দুটি সমাজের রূপ দেখি, একটি গ্রাম্য সংকীর্ণ সমাজ, অন্যটি শহরের বিস্তৃত ও উদাসীন সমাজ।
(ক) গৌরবি ও হারার সমাজের পরিচয় : গৌরবি ও হারা যে গ্রামে বাস করত, সেই সমাজ ছিল জাতপাত, কুসংস্কার ও ধর্মীয় ভেদবুদ্ধিতে ভরা। সেখানে মানুষের মানবিকতা হারিয়ে গিয়েছিল। নিবারণ নিজের পঙ্গু মাকে আশ্রয় না দিয়ে তাড়িয়ে দেয়, অথচ সমাজ তা মেনে নেয়। আবার যখন গৌরবি অনাথ মুসলমান ছেলে হারাকে নিজের সন্তানস্নেহে আশ্রয় দেয়, তখন সমাজ তার বিরোধিতা করে। এই সমাজ ছিল মূল্যবোধহীন, হৃদয়হীন ও সংকীর্ণ গ্রামীণ সমাজের প্রতিচ্ছবি।
(খ) শহরে তাদের সমাজ ‘সমুদ্রের মতো’ কেন : শহরে এসে গৌরবি ও হারা এমন এক সমাজে মিশে যায়, যেখানে জাত-ধর্ম-বর্ণের কোনো প্রভাব নেই। কলকাতার ফুটপাথে বাস করা মানুষদের জীবন এক অনন্ত সংগ্রামের মতো। সেখানে প্রত্যেকে শুধু বেঁচে থাকার লড়াইয়ে ব্যস্ত, কারো জাত বা ধর্ম জানার সময় কারোর নেই। সমুদ্রের মতোই সেই সমাজে সবাই মিশে গেছে কেউ পৃথক নয়, কেউ বিশিষ্ট নয়। তাই বলা হয়েছে, শহরে গৌরবির আর হারার সমাজ ‘সমুদ্রের মতো’।
উপসংহার : অতএব, গ্রামে গৌরবি ও হারার সমাজ ছিল সংকীর্ণতা ও কুসংস্কারে ভরা, আর শহরে তাদের সমাজ হয়ে ওঠে জাত-ধর্মবিহীন এক বিশাল মানবসমুদ্র। এই দুই সমাজের পার্থক্যের মধ্য দিয়েই লেখিকা মানবতার প্রকৃত অর্থকে উজ্জ্বলভাবে প্রকাশ করেছেন।
4. কোন্ পরিস্থিতিতে কেন গৌরবিকে গ্রাম ছেড়ে শহরের পথে পা বাড়াতে হয়েছিল - 'হারুন সালেমের মাসি' গল্প অবলম্বনে আলোচনা করো। ৫
অথবা, 'হারুন সালেমের মাসি' গল্পে গৌরবির শহরে যাবার কারণটি লেখো/কিংবা কারা শহরে যেতে তাকে বাধ্য করেছিল বলে তোমার মনে হয় আলোচনা করো।
উত্তর : মহাশ্বেতা দেবী রচিত ‘হারুন সালেমের মাসি’ গল্পে গৌরবি একজন বিকলাঙ্গ নারী, যিনি সমাজের সংকীর্ণতা ও ধর্মীয় ভেদাভেদের মধ্যেও মানবিক মূল্যবোধে সমৃদ্ধ। জন্ম থেকেই এক পায়ে খুঁতো থাকা গৌরবি নিজের পুত্র-কন্যা ও সমাজের অবহেলার মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করছে।
(ক) গৌরবির শহরে যাবার কারণ : গৌরবি শহরের পথে রওনা দেয় হারার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং নিজের সদ্যপ্রাপ্ত মাতৃত্ব রক্ষা করার জন্য। গ্রামীণ সমাজের সংকীর্ণতা, ধর্মান্ধতা ও কুসংস্কারের কারণে এখানে হারার সুরক্ষা সম্ভব নয়। শহরে গৌরবি জানে জনসমুদ্রের ভিড়ে হিন্দু-মুসলমানের পরিচয় অদৃশ্য হয়ে যায় এবং কেউ কারো জীবনে হস্তক্ষেপ করে না। তাই মাতৃত্ব রক্ষা ও শিশুর নিরাপত্তার জন্য সে শহরে যেতে বাধ্য হয়।
(খ) কারা শহরে যেতে তাকে বাধ্য করেছিল : গৌরবিকে শহরের পথে যেতে বাধ্য করেছিল সমাজের ভ্রুকুটি ও ধর্মান্ধতা। তার পুত্র নিবারণ হারাকে ছেড়ে দিতে না হলে বিপদ আসবে বলে হুমকি দেয়। ভাইপো মুকুন্দও হারাকে ত্যাগ না করলে গৌরবির শেষ আশ্রয় কেড়ে নেওয়ার ভয় দেখায়। এছাড়া গ্রামীণ সমাজের সীমাবদ্ধতা এবং কুসংস্কারের চাপে মাতৃত্ব ও শিশুর সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য শহরে পা বাড়ানো ছাড়া কোনো বিকল্প ছিল না।
উপসংহার : আলোচনা শেষে বলতে পারি গৌরবি শহরের পথে রওনা দেয় মাতৃত্ব ও হারার নিরাপত্তা রক্ষা করার জন্য। গ্রামীণ সমাজের সীমাবদ্ধতা, ধর্মান্ধতা এবং কুসংস্কারের হাত থেকে মুক্তি পেতে শহরের জনসমুদ্র তাকে নিরাপদ আশ্রয় দেয়।
5. 'হারুন সালেমের মাসি' গল্পের গৌরবি চরিত্র আলোচনা করো।
উত্তর : মহাশ্বেতা দেবীর ‘হারুন সালেমের মাসি’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র গৌরবি। তিনি একজন হতদরিদ্র হিন্দু বিধবা, যিনি কঠোর জীবনের মধ্যে থেকেও মানবতা ও মাতৃত্বের প্রতীক হয়ে ওঠেন। গল্পে তার চরিত্রে সমাজের সংকীর্ণতা, দারিদ্র্য ও মাতৃত্বের শক্তি একত্রে ফুটে উঠেছে। যা নিচে বিস্তারিত আলোচনা করছি-
গৌরবির চরিত্রের বৈশিষ্ট্য :
(ক) স্বাধীনতা ও কর্মসংস্থান : গৌরবি তার জীবন চালাতে জলাজঙ্গল থেকে শাকপাতা তুলত এবং তা বিক্রি করে পেট চালাত। তিনি নিজের কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহের সামর্থ্য রাখতেন।
(খ) দুই সন্তানের জননী : গৌরবির দুই সন্তান ছেলে নিবারণ ও মেয়ে পুঁটি। নিবারণের প্রতিহিংসা ও মেয়ের দরিদ্রতা তাকে সামাজিক ও পারিবারিকভাবে চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলে।
(গ) শুকিয়ে যাওয়া মাতৃত্ববোধ : নিজের সন্তানের অবহেলা ও সমাজের বৈষম্যে গৌরবির স্নেহধারা ম্লান হয়ে গিয়েছিল। তিনি নিঃসঙ্গ ও মানসিকভাবে একা বোধ করতেন, যা তার মাতৃত্বের অভাবকে স্পষ্ট করত।
(ঘ) হারানো মাতৃত্ববোধের জাগরণ : মাতৃহারা মুসলমান ছেলে হারা যখন তার কাছে আশ্রয় নেয় এবং বলে তার মা চাইছিল তাকে মাসির কাছে পাঠাতে, তখন গৌরবির বুকে মাতৃত্ব ও দায়িত্ববোধ নতুন করে জেগে ওঠে। সে নিজেকে প্রয়োজনীয় ও গৌরবান্বিত বোধ করে।
(ঙ) সমাজ ও স্বার্থপরতার ওপর জয় : গৌরবি সমাজের সীমাবদ্ধতা, ধর্ম ও স্বার্থপর পুত্রের আচরণকে উপেক্ষা করে হারাকে নিজের সন্তান হিসেবে গ্রহণ করেন। তিনি মাতৃত্বের স্নেহে সামাজিক ভেদাভেদ অতিক্রম করেন।
উপসংহার : আলোচনার শেষে বলতে পারি গৌরবির চরিত্র প্রমাণ করে যে, মাতৃত্ব ও স্নেহ মানুষের সবচেয়ে বড় শক্তি। এই গল্পে তিনি দেখিয়েছেন, ভালোবাসা ও যত্নই সমাজের সব বাধা অতিক্রম করতে পারে এবং অসহায় শিশুর জীবনে আশার আলো জাগাতে পারে।
🔹 লেখকের শেষ মন্তব্য :
দ্বাদশ শ্রেণীর চতুর্থ সেমিস্টার বাংলা সাজেশন ই-বুকটিতে (PDF) নতুন সিলেবাস অনুযায়ী প্রতিটি অধ্যায় থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর খুব সহজ ও পরিষ্কারভাবে সাজানো হয়েছে। তাই এই ই-বুক(PDF)টি কিনতে হলে মেনু অপশনে ক্লিক করে বিস্তারিত জানুন এবং প্রয়োজনে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
File Details :
PDF Name : হারুন সালেমের মাসি গল্পের বড় প্রশ্ন উত্তর PDF
Size : 1 MB
No. of Pages : 4
Mode : Read-only (Online)
Download Link : 18TH dEC
| আরো পড়ুন | প্রশ্নোত্তর |
|---|---|
| 1. প্রথম অধ্যায় : আন্তর্জাতিক সম্পর্ক PDF | Click here |
| 2. দ্বিতীয় অধ্যায় : প্রধান আঞ্চলিক সংগঠনসমূহ PDF | Click here |
| 3. ডাকঘর নাটকের প্রশ্ন উত্তর PDF | Click here |
WB Semester Team
📞 & 💬 9883566115
