🔹 দ্বাদশ শ্রেণি শিক্ষাবিজ্ঞান চতুর্থ সেমিস্টার চতুর্থ অধ্যায় প্রশ্নোত্তর
1. WHO-এর মতে, স্বাস্থ্য কী ? দৈনন্দিন জীবনে মানসিক স্বাস্থ্যের সুস্থতার সুরক্ষায় কী কী করণীয় হওয়া উচিত ?
উত্তর : স্বাস্থ্য শুধুমাত্র রোগহীনতা নয়, বরং শরীর, মন এবং সামাজিক জীবনের সম্পূর্ণ সুস্থতা বোঝায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) স্বাস্থ্যের সংজ্ঞা অনুযায়ী, "স্বাস্থ্য হল সম্পূর্ণ শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক সুস্থতার একটি অবস্থা এবং শুধু রোগ বা দুর্বলতার অনুপস্থিতি নয়।"
দৈনন্দিন জীবনে মানসিক স্বাস্থ্যের সুস্থতার সুরক্ষায় করণীয় : মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে ও সুরক্ষায় নিম্নলিখিত অভ্যাসগুলো মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ -
i. পর্যাপ্ত ঘুম বজায় রাখা : পর্যাপ্ত ঘুম শরীর ও মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দেয় এবং মানসিক চাপ কমায়। ঘুম না হলে উদ্বেগ, হতাশা ও মানসিক চাপ বাড়তে পারে।
ii. পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ : সুষম ও পুষ্টিকর খাবার শরীরের শক্তি বাড়ায় এবং মস্তিষ্ককে সতেজ রাখে। ভিটামিন ও আয়রন মন ও মেজাজ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে, ফলে মানসিক সুস্থতা বজায় থাকে।
iii. মাদক ও ধূমপান এড়ানো : মাদক এবং ধূমপান মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমায় এবং বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। মানসিক সুস্থতার জন্য এগুলো থেকে দূরে থাকা জরুরি।
iv. নিয়মিত শরীরচর্চা ও খেলাধুলা : দৈনিক শরীরচর্চা দেহ ও মনকে সতেজ রাখে। এটি মানসিক চাপ কমায়, মন ভালো রাখে এবং ইতিবাচক মনোভাব গড়ে তোলে।
v. সক্রিয় সামাজিক জীবন : আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা মানসিক স্বাস্থ্যকে উন্নত করে। প্রাতভ্রমণ বা পাঠাগারে যাওয়া একাকীত্ব কমায় এবং সুখী অনুভূতি বৃদ্ধি করে।
উপসংহার : মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষায় নিয়মিত অভ্যাস, সুষম খাদ্য, শারীরিক ব্যায়াম এবং সক্রিয় সামাজিক জীবন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো মেনে চললে মানসিক স্থিতিশীলতা, সুখ এবং সুস্থতা নিশ্চিত হয়।
2. উত্তম মানসিক স্বাস্থ্য গঠনে শিক্ষকের ভূমিকা লেখো।
উত্তর : শিক্ষার মূল লক্ষ্য হল শিশুর চাহিদা, প্রবণতা ও আগ্রহকে গুরুত্ব দিয়ে তাকে দেহ ও মনে সুস্থ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা। শিশুর সুস্থ মানসিক বিকাশে পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি শিক্ষকের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন সচেতন ও সহানুভূতিশীল শিক্ষকই শিশুর মধ্যে সুস্থ মানসিক স্বাস্থ্য গঠনে বড় ভূমিকা নিতে পারেন।
উত্তম মানসিক স্বাস্থ্য গঠনে শিক্ষকের ভূমিকা :
i. নমনীয় ও উত্তম ব্যবহার : শিক্ষকের আচরণ হবে সহজ, স্বাভাবিক ও নমনীয়। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণভাবে মিশলে তারা মানসিকভাবে নিরাপদ বোধ করে, যা তাদের সুস্থ মানসিক বিকাশে সহায়ক হয়।
ii. গণতান্ত্রিক মনোভাব : একজন আদর্শ শিক্ষক হবেন গণতান্ত্রিক মানসিকতার অধিকারী। তিনি শিক্ষার্থীদের প্রতি পক্ষপাতহীন আচরণ করবেন এবং তাদের আত্মনির্ভর ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠার সুযোগ দেবেন।
iii. মত প্রকাশের স্বাধীনতা প্রদান : শিক্ষার্থীদের নিজের মতামত প্রকাশের সুযোগ দিলে তাদের চিন্তাশক্তি ও মানসিক বিকাশ ঘটে। শিক্ষক বিদ্যালয়ে এমন পরিবেশ তৈরি করবেন, যেখানে শিক্ষার্থীরা নির্ভয়ে নিজের কথা বলতে পারে।
iv. শাস্তি থেকে বিরত থাকা : শাস্তি শিক্ষার্থীর মনে ভয় ও মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। তাই শিক্ষক শাস্তিদান এড়িয়ে চলবেন এবং বোঝানোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীর আচরণ সংশোধনের চেষ্টা করবেন।
v. পুরস্কার ও প্রশংসার ব্যবস্থা : শিক্ষার্থীদের সাফল্যের জন্য পুরস্কার ও প্রশংসা দিলে তারা শিক্ষায় আরও আগ্রহী ও সক্রিয় হয়ে ওঠে। এতে তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ে এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে।
উপসংহার : অতএব বলা যায়, একজন শিক্ষক তাঁর আচরণ, মনোভাব ও শিক্ষাদান পদ্ধতির মাধ্যমে শিশুর উত্তম মানসিক স্বাস্থ্য গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। সুস্থ মানসিক বিকাশের জন্য শিক্ষকের ভূমিকা অপরিহার্য।
3. উত্তম মানসিক স্বাস্থ্যর লক্ষণগুলি লেখো।
উত্তর : মানসিক স্বাস্থ্য বলতে মনের দিক থেকে সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থাকে বোঝায়। সুস্থ মানসিক স্বাস্থ্য ব্যক্তিকে তার চারপাশের পরিবেশের সঙ্গে সুন্দরভাবে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে। মানুষের মনের ভিতরের গুণাবলি ও অর্জিত ক্ষমতাগুলির সঠিক ও পূর্ণ প্রকাশই মানসিক সুস্বাস্থ্যের পরিচয় দেয়। কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণের মাধ্যমে আমরা ব্যক্তির উত্তম মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা পেতে পারি।
উত্তম মানসিক স্বাস্থ্যর প্রধান লক্ষণগুলি :
i. জীবন উপভোগের ক্ষমতা : উত্তম মানসিক স্বাস্থ্যসম্পন্ন ব্যক্তি অতীত বা ভবিষ্যৎ নিয়ে অযথা চিন্তিত না হয়ে বর্তমান জীবনকে উপভোগ করতে পারে। জীবনের ছোট ছোট আনন্দেও সে সন্তুষ্ট থাকতে শেখে।
ii. প্রতিকূলতা মোকাবিলার শক্তি : জীবনে নানা রকম বাধা ও প্রতিকূলতা আসতেই পারে। মানসিকভাবে সুস্থ ব্যক্তি এই প্রতিকূল পরিস্থিতি অতিক্রম করে দ্রুত আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে সক্ষম হয়।
iii. ভূমিকার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা : প্রতিটি মানুষকে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকা পালন করতে হয়। মানসিক সুস্বাস্থ্যসম্পন্ন ব্যক্তি এই সব ভূমিকার মধ্যে সামঞ্জস্য বজায় রেখে নিজের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারে।
iv. চিন্তা ও আচরণে নমনীয়তা : উত্তম মানসিক স্বাস্থ্যসম্পন্ন ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব নমনীয় হয়। সে অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং একই সঙ্গে নিজের দৃষ্টিভঙ্গিতেও স্থির থাকতে পারে।
v. আত্মমূল্যবোধ ও সন্তুষ্টি : মানসিকভাবে সুস্থ ব্যক্তি নিজের চাহিদা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। সে নিজের সক্ষমতা ও অক্ষমতা বুঝে বাস্তবসম্মতভাবে নিজেকে গ্রহণ করতে শেখে।
উপসংহার : অতএব বলা যায়, যে ব্যক্তি জীবন উপভোগের ক্ষমতা রাখে, প্রতিকূলতা মোকাবিলার শক্তি দেখাতে পারে, বিভিন্ন ভূমিকার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখে, চিন্তা ও আচরণে নমনীয়তা প্রকাশ করে এবং নিজের প্রতি আত্মমূল্যবোধ ও সন্তুষ্টি অনুভব করে তার মানসিক স্বাস্থ্য উত্তম ও সুস্থ বলে ধরা যায়।
4. মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা চিহ্নিতকরণের উপায়গুলি কী কী?
উত্তর : শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক না থাকলে তাদের দৈনন্দিন জীবন এবং শিক্ষাক্ষেত্রে নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। এ ধরনের সমস্যা পড়াশোনা, সহপাঠী সম্পর্ক এবং আত্মবিশ্বাসে প্রভাব ফেলে। অতএব, মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যাগুলি সময়মতো শনাক্ত করা ও সমাধানের চেষ্টা করা গুরুত্বপূর্ণ।
মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা চিহ্নিতকরণের ৫টি প্রধান উপায় :
i. অতিরিক্ত লাজুক স্বভাব : এই ধরনের শিক্ষার্থীরা অন্যদের সঙ্গে মেলামেশা এড়ায়। তারা ক্লাসে বা সহপাঠক্রমিক কার্যক্রমে অংশ নিতে চায় না এবং নিজের মধ্যে নিঃসঙ্গ থাকে।
ii বিদ্যালয়ে নিয়মিত অনুপস্থিতি : কিছু শিক্ষার্থী প্রায়শই স্কুলে আসে না। দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতি মানসিক সমস্যার একটি সম্ভাব্য লক্ষণ।
iii. শ্রেণিকক্ষে মনোযোগহীনতা : অনেক শিক্ষার্থী নিয়মিত পাঠে মনোযোগ দেয় না। তারা পাঠ ও কার্যক্রমে অংশগ্রহণে অনীহা দেখায়, যা মানসিক অস্বাস্থ্য নির্দেশ করে।
iv. হতাশা ও অলসতা : যারা শিক্ষায় বা অন্যান্য কার্যক্রমে ব্যর্থ হয়, তারা সহজেই হতাশ হয়ে পড়ে। এ ধরনের অলসতা এবং আগ্রহের অভাব মানসিক সুস্থতার অভাবের লক্ষণ।
v. আক্রমণাত্মক আচরণ : কিছু শিক্ষার্থী সামান্য কারণে রেগে যায় বা অন্যদের প্রতি আক্রমণাত্মক আচরণ করে। এ ধরনের মনোভাব মানসিক অস্থিরতার ইঙ্গিত দেয়।
উপসংহার : শিক্ষার্থীদের আচরণ ও মনোভাব লক্ষ্য করে মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যাগুলি সময়মতো শনাক্ত করা যায়। এটি শিক্ষকদের সমস্যা সমাধান এবং শিক্ষার্থীর সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
🔹লেখকের শেষ মন্তব্য : আমাদের প্রকাশিত দ্বাদশ শ্রেণীর চতুর্থ সেমিস্টার শিক্ষাবিজ্ঞান সাজেশন ই-বুকটিতে(PDF) বোর্ডের নতুন সিলেবাস ও নতুন প্রশ্নপত্রের নিয়ম মেনে প্রতিটি অধ্যায় থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর খুব সহজ ও পরিষ্কারভাবে সাজানো হয়েছে। তাই এই ই-বুক(PDF)টি কিনতে হলে মেনু অপশনে ক্লিক করে বিস্তারিত জানুন এবং প্রয়োজনে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
File Details :
PDF Name : চতুর্থ অধ্যায় মানসিক স্বাস্থ্য PDF
Size : 1 MB
No. of Pages : 3
Mode : Read-only (Online)
Download Link :
| আরো পড়ুন | প্রশ্নোত্তর |
|---|---|
| 1. শিখন এবং শিখন কৌশল প্রশ্ন উত্তর PDF | Click here |
| 2. তৃতীয় অধ্যায় বৃদ্ধি, সৃজনশীলতা এবং ব্যক্তিত্ব PDF | Click here |
| 3. দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষাবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায় শিখন PDF | Click here |
WB Semester Team
📞 & 💬 9883566115
