রাষ্ট্রবিজ্ঞান তৃতীয় অধ্যায় বিশ্বায়ন প্রশ্ন উত্তর PDF
🔹 দ্বাদশ শ্রেণির চতুর্থ সেমিষ্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান তৃতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর
[প্রতিটি প্রশ্নের মান 6]1. বিশ্বায়ন কাকে বলে ? [HS-2019]
অথবা,
বিশ্বায়নের অর্থ ও সংজ্ঞা লেখো।
উত্তর : ‘Globalisation’-এর বাংলা প্রতিশব্দ হল ‘বিশ্বায়ন’। এটি একটি বহুমাত্রিক ধারণা, যার প্রভাব রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে দেখা যায়। বিভিন্ন সমাজবিজ্ঞানী বিশ্বায়ন সম্পর্কে নানা মতামত প্রকাশ করেছেন। তাই এর একটি নির্দিষ্ট সংজ্ঞা দেওয়া সহজ নয়। নিচে বিশ্বায়নের সংজ্ঞা বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হল -
বিশ্বায়নের সংজ্ঞা :
1. অ্যান্টনি গিডেন্স-এর অভিমত :
সমাজবিজ্ঞানী অ্যান্টনি গিডেন্স-এর মতে, বিশ্বায়ন এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে দূরের ঘটনা স্থানীয় বিষয়ে প্রভাব ফেলে এবং স্থানীয় ঘটনাও দূরের ক্ষেত্রে প্রভাব সৃষ্টি করে। তাঁর মতে, বিশ্বায়নের মূল ভিত্তি হল আধুনিকতার চার উপাদান— পুঁজিবাদ, শিল্পায়ন, নজরদারি ও সামরিক নিয়ন্ত্রণ।
2. দীপক নায়ার-এর অভিমত :
দীপক নায়ার-এর মতে, বিশ্বায়ন এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক মুক্ত পরিবেশে বিশ্ব অর্থনীতির অন্তর্ভুক্ত দেশগুলির মধ্যে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সমন্বয় গড়ে ওঠে।
3. রোল্যান্ড রবার্টসন-এর অভিমত :
বিশ্বায়ন ধারণার অন্যতম প্রবর্তক রোল্যান্ড রবার্টসন -এর মতে, বিশ্বায়ন হলো বিশ্বের সংকোচন ও পারস্পরিক নির্ভরশীলতার প্রক্রিয়া। তিনি বলেন, এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামরিক ক্ষেত্রে একে অপরের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।
4. জোসেফ স্টিগলিৎজ-এর অভিমত :
জোসেফ স্টিগলিৎজ-এর মতে, বিশ্বায়ন হলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও জনগণের মধ্যে নিবিড় সংযোগের প্রক্রিয়া। এটি পরিবহণ ও যোগাযোগের ব্যয় কমিয়েছে এবং দ্রব্য, পরিসেবা, পুঁজি, জ্ঞান ও মানুষের অবাধ চলাচলের পথে থাকা কৃত্রিম প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করেছে।
5. পিটার মারকাস-এর অভিমত :
পিটার মারকাস-এর মতে, বিশ্বায়ন হলো পুঁজিবাদের এমন একটি বিশেষ রূপ, যা ভৌগোলিক এবং মানবজীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুঁজিবাদী সম্পর্কের সম্প্রসারণ ঘটায়।
6. ডেভিড হেল্ড-এর অভিমত :
ডেভিড হেল্ড-এর মতে, বিশ্বায়ন হলো মিথস্ক্রিয়া ও ক্ষমতার আন্তর্মহাদেশীয় বা আন্তঃআঞ্চলিক প্রবাহের একটি নেটওয়ার্ক।
বিশ্বায়নের গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা :
সাধারণভাবে, বিশ্বের এক প্রান্তের মানুষের সঙ্গে অন্য দেশের মানুষের অবাধ বাণিজ্যিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক যোগাযোগ এবং পারস্পরিক আদানপ্রদানসহ বাজার অর্থনীতির প্রভাবই বিশ্বায়ন।
2. বিশ্বায়নের বিভিন্ন রূপগুলির পর্যালোচনা করো। [HS-2017]
অথবা,
বিশ্বায়নের বিভিন্ন দিকগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো।
অথবা,
বিশ্বায়নের প্রকৃতি আলোচনা করো। [HS-'19, '15, '11, '09, '07]
উত্তর : বিশ্বায়ন হলো একটি আন্তর্জাতিক বা বিশ্বব্যাপী প্রক্রিয়া। রবসনের মতে, বিশ্বায়নের ফলে পৃথিবী ছোট হয়ে আসে এবং সমগ্র দুনিয়াকে একটি একক হিসেবে দেখার ধারণা তৈরি হয়। নিচে বিশ্বায়নের বিভিন্ন রূপ সম্পর্কে আলোচনা করছি-
বিশ্বায়নের বিভিন্ন রূপ :
1. অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন :
বিশ্বায়নের মূল দিক হল এর অর্থনৈতিক প্রকৃতি। অর্থনৈতিক বিশ্বায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার, বিশ্বব্যাংক ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো বিশ্বব্যাপী মুক্ত বাণিজ্যের দ্রুত প্রসার, পুঁজির অবাধ চলাচল, বহুজাতিক সংস্থার বিনিয়োগ ও বাণিজ্য, বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষদের মধ্যে অভিগমন ও নির্গমন এবং তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগের অবাধ বিস্তার।
2. রাজনৈতিক বিশ্বায়ন :
১৬৪৮-এর ওয়েস্টফেলিয়ার শান্তিচুক্তির পর ভূখণ্ডভিত্তিক রাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার মূল একক হিসেবে গণ্য করা হতো। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও বিশ্ববাজারের প্রসারের ফলে রাষ্ট্রব্যবস্থায় পরিবর্তন এসেছে এবং রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। রাজনৈতিকভাবে, বিশ্বায়ন জাতিরাষ্ট্রের বিপরীতে অবস্থান করে। পাশ্চাত্যের প্রবক্তারা জাতিরাষ্ট্র বিলোপ চান না, বরং এমন এক বিশ্বব্যবস্থা চান যেখানে ধনতান্ত্রিক শ্রেণির স্বার্থ রক্ষা পাবে এবং স্বায়ত্তশাসনমূলক প্রতিষ্ঠানও থাকবে। আঞ্চলিক স্তরে বৃহৎ পুঁজির অধীনে আঞ্চলিকতা লক্ষ্য করা যায়। রাজনৈতিক বিশ্বায়ন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়, যেমন সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ (UN), OECD ও EU।
3. সাংস্কৃতিক বিশ্বায়ন :
সাংস্কৃতিক দিক থেকে বিশ্বায়নের মূল লক্ষ্য হলো সারা বিশ্বে সমজাতীয় সংস্কৃতি গড়ে তোলা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বহুমুখী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এক ছাঁচে ঢেলে সমজাতীয় সংস্কৃতি তৈরি করা হয়, যা অনেকে ‘মার্কিনি ম্যাকডোনাল্ড সংস্কৃতি’ বলে উল্লেখ করেছেন। সাংস্কৃতিক বিশ্বায়নের মাধ্যমে এক দেশের উদ্বৃত্ত পণ্য, তথ্যপ্রযুক্তি ও ধ্যানধারণা অন্য দেশে প্রবাহিত হয়। এতে মানুষে মানুষে সাংস্কৃতিক ভেদাভেদ কমে আসে এবং এতে সাহায্য করে উন্নত প্রযুক্তি, যেমন— ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা।
পরিশেষে বলা যায়, বিশ্বায়ন হল এমন একটি প্রক্রিয়া, যা সমগ্র বিশ্বকে ‘ভুবন গ্রাম’-এ পরিণত করেছে। ফলে পৃথিবীব্যাপী পারস্পরিক সংযোগ এখন হাতের মুঠোয় চলে এসেছে।
7. সাংস্কৃতিক বিশ্বায়নের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকগুলি সম্পর্কে আলোচনা করো।
অথবা,
সাংস্কৃতিক বিশ্বায়নের প্রভাবগুলি লেখো।
অথবা,
সাংস্কৃতিক বিশ্বায়নের সুফল ও কুফলগুলি লেখো।
অথবা,
সাংস্কৃতিক বিশ্বায়নের ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর : সাংস্কৃতিক বিশ্বায়নের প্রভাব : সাংস্কৃতিক বিশ্বায়নের ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। যেমন -
ইতিবাচক দিক :
1. দেশীয় অর্থনীতির বিকাশ :
সাংস্কৃতিক বিশ্বায়নের ফলে বৈশ্বিক পর্যটকদের আগ্রহ বৃদ্ধি পায়, যা স্থানীয় শিল্প ও হস্তশিল্প সামগ্রীর আন্তর্জাতিক বিপণনের মাধ্যমে দেশীয় অর্থনীতিকে উন্নত করে।
2. ডিজিটাল সৃজনশীলতা :
বিশ্বায়ন অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ও স্ট্রিমিং সেবার মাধ্যমে সাংস্কৃতিক সৃজনশীলতাকে ডিজিটাল করে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে সহজলভ্য করছে। ইউটিউব, নেটফ্লিক্স, স্পটিফাই-এর মতো প্ল্যাটফর্মে সিনেমা, সঙ্গীত, টিভি শো ও সাক্ষাৎকার সহজে পৌঁছে যাচ্ছে।
3. বহুসংস্কৃতিবাদ :
বিশ্বায়নের মাধ্যমে অপর সংস্কৃতির সঙ্গে আদানপ্রদানের সুযোগ তৈরি হওয়ায় মানুষ অন্যদেশের মূল্যবোধ, জীবনধারা ও শিল্প দক্ষতার সঙ্গে পরিচিত হচ্ছে। এর ফলে সব দেশে বহুসংস্কৃতিবাদ গড়ে উঠেছে, যেমন বিদেশি পোশাক, ইংরেজি ভাষার প্রাধান্য এবং ম্যাকডোনাল্ড, কেএফসি, ডোমিনোস, পিৎজা হাটের প্রসার।
নেতিবাচক দিক :
1. জাতীয় সংস্কৃতির বিলুপ্তি :
বিশ্বায়ন সারা পৃথিবীতে একই ধরনের ভোগবাদী পণ্যসংস্কৃতি গড়ে তোলার চেষ্টা করায় উন্নয়নশীল দেশগুলির বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। আঞ্চলিক জাতীয় সংস্কৃতির স্বাতন্ত্র্য কমে যাচ্ছে এবং জাতীয় সংস্কৃতি ক্রমশ বিলুপ্তির পথে।
2. পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রসার :
উন্নত তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্বজনীন সংস্কৃতি তৈরি হলেও, পশ্চিমি দেশগুলি বাণিজ্যিক স্বার্থে ভোগবাদী সংস্কৃতি উন্নয়নশীল দেশে প্রচার করছে। টিভি, সিনেমা, সোশ্যাল মিডিয়া, অনলাইন গেমস এবং বিজ্ঞাপন কিশোর-কিশোরীদের মানসিকতা ও আদর্শকে প্রভাবিত করছে, যার ফলে জাতীয় চেতনা ও সুস্থ চিন্তার বিকাশ বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে।
3. নারী সমাজের বিপন্নতা :
বিশ্বায়নের ফলে মহিলাদের কর্মসংস্থান বেড়েছে, তবে প্রকৃত ক্ষমতায়ন হয়নি। বিজ্ঞাপন, বিমান, হোটেল, সোশ্যাল মিডিয়া ও ফ্যাশন ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান থাকলেও নারী সৌন্দর্যকে পণ্যায়নে পরিণত করা হচ্ছে। নারীরা প্রলোভন ও অমর্যাদাকর পেশায় নিযুক্ত হচ্ছে, নারী পাচার, নির্যাতন ও শিশু পাচারের ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বহুজাতিক সংস্থার মহিলা শ্রমিকরাও অস্থায়ী ও অনিশ্চিত অবস্থায় কাজ করছেন এবং শোষণ ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।
উপসংহার :
বিশ্বায়ন জাতীয় মূল্যবোধ ও চরিত্রকে পরিবর্তিত করেছে। একদিকে বৈশ্বিক নাগরিক সমাজের ধারণা গড়ে উঠেছে, অন্যদিকে জাতীয় সীমানা অতিক্রম করে বিশ্বনাগরিকতার ধারণা জনপ্রিয় হয়েছে। অধ্যাপক কে এম পানিক্কর-এর মতে, তৃতীয় বিশ্বের দেশে চলা সাংস্কৃতিক প্রভাব আসলে সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা।
2 বিশ্বায়নের বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো।
উত্তর : বিশ্বায়ন একটি বহুমাত্রিক (Multidimensional) প্রক্রিয়া, যা মানুষের জীবনের প্রায় সকল ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করে।
বিশ্বায়নের বৈশিষ্ট্য :
1. মুক্ত বাজার অর্থনীতি :
বিশ্বায়নের মূল অংশ হল বিশ্বব্যাপী পুঁজি ও আর্থিক লেনদেন। এটি এমন একটি বৈশ্বিক মুক্ত বাজার সৃষ্টি করে, যেখানে পণ্য, পুঁজি, প্রযুক্তি ও পরিষেবার চলাচল রাষ্ট্রের সীমারেখায় আবদ্ধ নয়। এছাড়া শুল্ক কমানো, শেয়ার বাজারের নিয়ন্ত্রণ শিথিল করা এবং একচেটিয়া বেসরকারি সংস্থাগুলিকে সুবিধা দেওয়া ইত্যাদিও এই নীতির অংশ।
2. রাষ্ট্রীয় সীমানার উন্মুক্তকরণ :
বিশ্বায়ন সংরক্ষণবাদের বিরোধিতা করে এবং বিদেশি পণ্য ও পরিষেবার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় সীমানা উন্মুক্ত করার পক্ষে। জাতীয় বাজার ও দেশীয় পণ্যের জন্য রাষ্ট্রীয় সংরক্ষণমূলক বিধিনিষেধকে অকাম্য মনে করা হয়। স্কট বার্চিল-এর মতো তাত্ত্বিকেরা সংরক্ষণবাদকে জাতীয় স্বার্থবিরোধী মনে করেন।
3. উদারীকরণ, বেসরকারিকরণ ও বিলগ্নিকরণ :
বিশ্বায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফল হল উদারীকরণ, বেসরকারিকরণ ও বিলগ্নিকরণ। বিশ্বায়নের ফলে দেশগুলো উদারীকরণ ও বেসরকারিকরণের পথে অগ্রসর হয় এবং জাতীয় বাজারগুলো আন্তর্জাতিক বাজারের জন্য উন্মুক্ত হয়।
4. বহুজাতিক সংস্থার প্রভাব :
বিশ্বায়ন জাতীয় সীমানা অতিক্রমকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রভাব বৃদ্ধি করেছে। GATT, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা, বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডারের গুরুত্ব বেড়েছে এবং এরা অনেক সময় উন্নয়নশীল দেশের রাজস্ব ও প্রশাসনিক নীতিকে প্রভাবিত করে।
5. ভূবন গ্রাম প্রতিষ্ঠা :
বিশ্বায়নের ফলে যোগাযোগ বিপ্লব ঘটেছে। বৈদ্যুতিন যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি দূরত্ব ও সময়ের ব্যবধান কমিয়ে ‘ভূবন গ্রাম’ প্রতিষ্ঠা সম্ভব করেছে।
6.আর্থিক উদারীকরণ :
বিশ্বায়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল উদারীকরণ, যা দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে সরকারি প্রভাব থেকে মুক্ত রাখে। এতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগে রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ শিথিল বা অপসারণ হয় এবং উন্নয়নশীল দেশের বাজারকে বিশ্ববাজারের সঙ্গে সংযুক্ত করা সহজ হয়।
পরিশেষে বলা যায় বিশ্বায়ন বিশ্বব্যাপী মুক্ত বাজার অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রতিটি দেশের পণ্য ও পরিসেবা নীতিতে পরিবর্তন এনেছে এবং সাংস্কৃতিক ও জ্ঞানের আদানপ্রদানের মাধ্যমে বৈশ্বিক নাগরিক সমাজের রূপরেখা তৈরিতেও ভূমিকা রেখেছে।
9. রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের উপর বিশ্বায়নের প্রভাব আলোচনা করো। [HS Model Question]
উত্তর : বিশ্বায়ন রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। তাই রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের উপর বিশ্বায়নের প্রভাব নিচে আলোচনা করা হল -
রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের উপর বিশ্বায়নের প্রভাব :
1. বাজার ও বাণিজ্য :
বর্তমান বিশ্বায়নে রাষ্ট্রের স্থানে বাজারকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বহুজাতিক কোম্পানির প্রভাব বাড়ার কারণে রাষ্ট্রের ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। পণ্যের অবাধ বাজার, বেসরকারিকরণ, উদারীকরণ এবং বিদেশি পুঁজি লগ্নিতে অনুমতি দেওয়ার মাধ্যমে রাষ্ট্রকে বাজারকেন্দ্রিক সংগঠনে রূপান্তরিত হতে হয়েছে।
2. রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের হ্রাস :
বিশ্বায়নের ফলে পূর্বে অসীম সার্বভৌম ক্ষমতা থাকা জাতিরাষ্ট্রের ক্ষমতা অনেকাংশে খর্ব হয়েছে। কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের কাঠামো বদলে ‘ন্যূনতম রাষ্ট্রে’ রূপান্তরিত হয়েছে এবং রাষ্ট্রের কার্যক্রমের পরিধি সীমিত হয়েছে। পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ও আঞ্চলিকীকরণের কারণে রাষ্ট্রগুলোকে তাল মিলিয়ে কাজ করতে হয়।
3. বহুজাতিক সংস্থার প্রভাব :
উন্মুক্ত বাণিজ্যের ফলে বহুজাতিক সংস্থা তাদের উদ্যোগ সম্প্রসারিত করেছে। তারা বিপুল পুঁজি বিনিয়োগ করতে পারে, যা অনেক দেশের শিল্পনীতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে দেশগুলো প্রায় বাধ্য হয়ে তাদের নীতি নির্ধারণে বহুজাতিক সংস্থার মতামত মেনে চলে।
4. অর্থনৈতিক আগ্রাসন :
বিশ্বায়নের ফলে পুঁজি ও শ্রমের অবাধ চলাচল অনুমোদিত হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি ও আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে এক দেশ থেকে অন্য দেশে কাজ হচ্ছে, এবং সরকারের ভূমিকা সীমিত। ফলে সার্বভৌম জাতিরাষ্ট্রের স্বাধীন অর্থনৈতিক নীতি প্রভাবিত হয়েছে।
5. পারমাণবিক ভীতি :
বর্তমান যুগ পারমাণবিক অস্ত্রের যুগ। শক্তিধর রাষ্ট্র পারমাণবিক অস্ত্রের মাধ্যমে দুর্বল রাষ্ট্রকে ভীতি প্রদর্শন ও তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করাতে সক্ষম। তাই বলা যায় প্রযুক্তিগত উন্নতি ভূখণ্ডভিত্তিক রাষ্ট্রব্যবস্থাকে অপ্রাসঙ্গিক করে তুলেছে।
6. কাঠামোগত পুনর্বিন্যাস :
বিশ্বায়নের ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলো স্বাধীনভাবে নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে পারছে না। আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার, বিশ্বব্যাংক ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নির্দেশে তারা কাঠামোগত পুনর্বিন্যাসে বাধ্য হচ্ছে। এর ফলে দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা বেড়েছে এবং রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ণ হয়েছে।
সুতরাং আলোচনার আলোকে বলা যায়, বিশ্বায়ন নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বকে দুর্বল করেছে।
🔹 লেখকের শেষ মন্তব্য :
দ্বাদশ শ্রেণির চতুর্থ সেমিষ্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান তৃতীয় অধ্যায় 'বিশ্বায়ন' থেকে 6 নম্বর মানের আরো অনেকগুলি খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর আছে। সেগুলি পেতে হলে আমাদের WB Semester Team প্রকাশিত দ্বাদশ শ্রেণির চতুর্থ সেমিস্টার সাজেশন ই-বুকগুলি (PDF) নিতে হবে। সাজেশন ই-বুক সম্পর্কে জানতে Menu Option এ ক্লিক করো বা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
File Details :
PDF Name : ক্লাস 12 তৃতীয় অধ্যায় : বিশ্বায়ন PDF
Size : 1 MB
No. of Pages : 2
Download Link : Coming Soon
আরো পড়ুন | প্রশ্নোত্তর |
---|---|
1. প্রথম অধ্যায় : আন্তর্জাতিক সম্পর্ক PDF | Click here |
2. দ্বিতীয় অধ্যায় : প্রধান আঞ্চলিক সংগঠনসমূহ PDF | Click here |
3. ডাকঘর নাটকের প্রশ্ন উত্তর PDF | Click here |
4. বাঙালির চলচ্চিত্রের ইতিহাস PDF | Click here |
WB Semester Team
📞 & 💬 9883566115