চতুর্থ অধ্যায় : ভারত সরকারের বিভিন্ন বিভাগসমূহ PDF
🔹 দ্বাদশ শ্রেণির চতুর্থ সেমিষ্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞান চতুর্থ অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর
[প্রতিটি প্রশ্নের মান 6]
1. ভারতের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলি আলোচনা করো। [HS Model Question]
অথবা,
ভারতের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাসমূহ বিশ্লেষণ করো। [HS-2015, 11, 08]
অথবা,
ভারতের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও পদমর্যাদা আলোচনা করো। [WBCHSE '13, '05, '03]
উত্তর : ভারতের সংবিধান অনুযায়ী কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থার সর্বোচ্চ পদে আছেন রাষ্ট্রপতি। সংসদীয় গণতন্ত্রের নিয়ম মেনে তিনি দেশের সাংবিধানিক শাসকের দায়িত্ব পালন করেন। এখন আমি নিচে ভারতের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করছি -
ভারতের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলি :
রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কার্যাবলি সংবিধানের ৫৩(১) নং ধারায় উল্লেখ রয়েছে। এই ক্ষমতাগুলি কয়েকটি ভাগে বিভক্ত করা যায়। যেমন -
1. শাসন সংক্রান্ত ক্ষমতা : i. রাষ্ট্রপতি ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগ করেন এবং প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী অন্যান্য মন্ত্রীদেরও নিয়োগ করে থাকেন। এছাড়া তিনি সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট, নির্বাচন কমিশন এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদেরও নিয়োগ দেন। ii. রাষ্ট্রপতি ভারতের তিন বাহিনীর সর্বাধিনায়ক। তিনি স্থল, নৌ এবং বায়ু বাহিনীর প্রধানদের নিয়োগ করেন এবং জাতীয় প্রতিরক্ষা কমিটিরও প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
2. আইন সংক্রান্ত ক্ষমতা : রাষ্ট্রপতি পার্লামেন্টের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তিনি উভয় কক্ষের অধিবেশন আহ্বান বা স্থগিত করতে পারেন এবং প্রয়োজন হলে লোকসভাকে ভাঙতে পারেন। i. রাষ্ট্রপতির সম্মতি ছাড়া কোনো বিল আইন হিসেবে প্রণীত হতে পারে না। ii. পার্লামেন্টের অধিবেশন না থাকলে, রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করতে পারেন।
3. অর্থ সংক্রান্ত ক্ষমতা : কোনো অর্থবিল রাষ্ট্রপতির সম্মতি ছাড়া লোকসভায় পেশ করা যায় না। তবে তিনি অর্থবিল বা সংবিধান সংশোধনী বিলকে পুনর্বিবেচনার জন্য ফেরত পাঠাতে পারেন না। রাষ্ট্রপতি প্রতি ৫ বছর অন্তর অর্থ কমিশন গঠন করেন।
4. বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা : রাষ্ট্রপতি সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতিদের নিয়োগ করেন এবং সংসদের সুপারিশে তাদের পদচ্যুত করতে পারেন। এছাড়া, ৭২নং ধারার অনুযায়ী তিনি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তির দণ্ড মকুব করতে পারেন।
5. জরুরি অবস্থাকালীন ক্ষমতা : যদি দেশে বা কোনো রাজ্যে সাংবিধানিক অচলাবস্থা বা অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয়, রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন। তিনি তিন ধরনের জরুরি ক্ষমতা ব্যবহার করেন: জাতীয় জরুরি অবস্থা, শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা এবং আর্থিক জরুরি অবস্থা।
উপসংহার : রাষ্ট্রপতির প্রকৃত মর্যাদা ও মন্ত্রীসভার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে নানা মতভেদ আছে। কিছু সংবিধান বিশেষজ্ঞ মনে করেন রাষ্ট্রপতিই দেশের প্রকৃত শাসক, কিন্তু বাস্তববাদী বিশেষজ্ঞদের মতে তিনি নিয়মতান্ত্রিক শাসক। ক্ষমতা বিশ্লেষণের পর মনে হতে পারে রাষ্ট্রপতির ব্যাপক ক্ষমতা আছে, কিন্তু বাস্তবে তিনি নামমাত্র শাসক। তবুও ভারতের রাষ্ট্রপতিকে দেশবাসীর আশা ও জাতীয় ঐক্যের প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়।
2. ভারতীয় পার্লামেন্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলি আলোচনা করো। [HS-2023, '20, '18]
অথবা,
ভারতের সংসদের কার্যাবলি বিশ্লেষণ করো। [HS-2011, '13, '07, '03]
অথবা,
পার্লামেন্টের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলি আলোচনা করো। [HS Model Question]
উত্তর : পার্লামেন্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলি সম্পর্কে ভারতীয় সংবিধানের Part-V অংশে উল্লেখ করা হয়েছে। এখন আমি নিচে বিস্তারিত আলোচনা করছি -
ভারতীয় পার্লামেন্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলি :
1. আইন প্রণয়নের ক্ষমতা : পার্লামেন্টের আইন প্রণয়ন ক্ষমতা ভারতীয় সংবিধানের সপ্তম তফসিলে তিন তালিকায় ভাগ করা হয়েছে: কেন্দ্রীয়, রাজ্য এবং যুগ্ম তালিকা। পার্লামেন্ট কেন্দ্রীয় তালিকায় থাকা বিষয়ে একা আইন প্রণয়ন করতে পারে, রাজ্য তালিকায় থাকা বিষয়ে দুই বা ততোধিক রাজ্যের অনুরোধে আইন প্রণয়ন করা হয়, এবং যুগ্ম তালিকায় থাকা বিষয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য একসঙ্গে আইন প্রণয়ন করতে পারে।
2. অর্থ সংক্রান্ত ক্ষমতা : সংবিধান অনুসারে কেন্দ্রীয় সরকারের আয়-ব্যয় নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা পার্লামেন্টের হাতে রয়েছে। এই ক্ষমতা প্রধানত লোকসভা সদস্যদের কাছে অর্পিত। অর্থ বিষয়ে রাজ্যসভার কার্যত কোনো ক্ষমতা নেই। সরকারি আয়-ব্যয় ঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে কি না তা দেখার জন্য লোকসভায় দুটি গুরুত্বপূর্ণ কমিটি রয়েছে: সরকারি গাণিতিক কমিটি এবং আনুমানিক ব্যয় পরীক্ষা কমিটি।
3. বিচার সংক্রান্ত ক্ষমতা : পার্লামেন্ট আইনসভার অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে যে-কোনো ব্যক্তিকে শাস্তি দিতে পারে। এছাড়া, পার্লামেন্ট কেন্দ্রশাসিত এলাকায় হাইকোর্ট স্থাপন, কোনো নিম্ন আদালতকে হাইকোর্টের মর্যাদা দেওয়া, এবং ওই অঞ্চলের হাইকোর্টের ক্ষমতা বাড়াতে পারে।
4.শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ : সংবিধান অনুযায়ী সমগ্র মন্ত্রীসভা তার নীতি ও কর্মকাণ্ডের জন্য পার্লামেন্ট, বিশেষ করে লোকসভার কাছে দায়বদ্ধ। পার্লামেন্ট শাসন বিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে বিভিন্নভাবে, যেমন—অধিবেশনের সময় মন্ত্রীদের প্রশ্ন করা, রাষ্ট্রপতির ভাষণে উল্লেখিত নীতি ও কর্মসূচি নিয়ে বিতর্ক, বাজেটের ত্রুটি বা বিচ্যুতি নিয়ে সমালোচনা, বিল আলোচনায় প্রস্তাব উত্থাপন, জরুরি বিষয়ে মুলতুবি প্রস্তাব আনা, দৃষ্টি আকর্ষণী প্রস্তাব, নিন্দাসূচক বা অনাস্থা প্রস্তাব আনা, এবং পার্লামেন্টের কমিটির রিপোর্ট নিয়ে বিতর্ক প্রভৃতি।
5. নতুন রাজ্য গঠন ও পুনর্গঠন সংক্রান্ত ক্ষমতা : সংবিধানের ৩নং ধারা অনুযায়ী পার্লামেন্ট নতুন রাজ্য গঠন, কোনো রাজ্যের পুনর্গঠন বা অংশ বিচ্ছিন্ন করা, দুই বা ততোধিক রাজ্য যুক্ত করা, এবং রাজ্যের সীমানা বা নাম পরিবর্তনের ক্ষমতা পার্লামেন্টের রয়েছে।
6. অন্যান্য ক্ষমতা : সংবিধানের ১৬৯(১) নং ধারা অনুযায়ী পার্লামেন্ট কোনো রাজ্যের বিধানসভার দ্বিতীয় কক্ষ গঠন বা বিলোপ করতে পারে। এটি করার জন্য সংশ্লিষ্ট রাজ্যের বিধানসভায় অধিকাংশ সদস্য এবং উপস্থিত ভোটদাতাদের দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থনের প্রস্তাব প্রয়োজন।
11. ভারতের সুপ্রিমকোর্টের গঠন ও কার্যাবলি আলোচনা করো। HS-2023, 20, '18]
অথবা,
ভারতের সুপ্রিমকোর্টের গঠন ও কার্যাবলি ব্যাখ্যা করো। [HS-2014, '09]
উত্তর : সুপ্রিমকোর্টের গঠন : সংবিধানের ১২৪নং ধারা অনুযায়ী সুপ্রিমকোর্টে ১ জন প্রধান বিচারপতি এবং কয়েকজন অন্যান্য বিচারপতি নিয়ে গঠিত হয়। বর্তমানে এটি ১ জন প্রধান বিচারপতি ও সর্বাধিক ৩৩ জন অন্যান্য বিচারপতি নিয়ে মোট ৩৪ জনের সমন্বয়ে সুপ্রিমকোর্ট গঠিত। নিচে আমি বিস্তারিত আলোচনা করছি -
সুপ্রিমকোর্টের ক্ষমতা ও কার্যাবলি : সুপ্রিমকোর্টের কার্যক্ষেত্র মূলত চারটি ভাগে বিভক্ত। এই ক্ষেত্রগুলির মধ্য দিয়েই সুপ্রিমকোর্ট তার গুরুত্বপূর্ণ কাজ সম্পন্ন করে। এগুলি হল-
1. মূল এলাকা : ভারতীয় সংবিধানের ১৩১নং ধারা অনুযায়ী সুপ্রিমকোর্টের মূল এলাকার কাজ হলো রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বা কেন্দ্র ও রাজ্য সংক্রান্ত যেসব বিরোধ বা বিতর্ক হয় তা মীমাংসা করা। তাছাড়া রাষ্ট্রপতি এবং উপরাষ্ট্রপতির নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো বিরোধ বা সমস্যা সৃষ্টি হলে তার নিষ্পত্তির দায়িত্বও সুপ্রিমকোর্টের মূল এলাকার অন্তর্ভুক্ত।
2. আপিল এলাকা : ভারতের কোনো রাজ্যের হাইকোর্টের রায় বা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টে আপিল করা যায়। আপিল এলাকা চার ভাগে বিভক্ত—i. সংবিধানের ব্যাখ্যা সংক্রান্ত আপিল, ii. দেওয়ানি আপিল, iii. ফৌজদারি আপিল, iv. বিশেষ অনুমতিসূত্রে আপিল।
3. পরামর্শদান এলাকা : সংবিধানের ধারা ১৪৩(১) অনুযায়ী, রাষ্ট্রপতি যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণ আইন বা বিষয় সম্পর্কে পরামর্শ চান, তবে তিনি সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ নিতে পারেন। তবে সরকার সুপ্রিমকোর্টের পরামর্শ মেনে চলার বাধ্যবাধকতায় নেই।
4. নির্দেশ, আদেশ বা লিখিত নির্দেশ জারি করার এলাকা : সংবিধানের তৃতীয় অধ্যায় ভারতের নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষা করার দায়িত্ব সুপ্রিমকোর্টকে দিয়েছেন। কোনো মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হলে নাগরিকরা তা বলবৎ ও কার্যকর করার জন্য সুপ্রিমকোর্টে আবেদন করতে পারেন।
উপসংহার : ভারতীয় সুপ্রিমকোর্ট দেশের সর্বোচ্চ আদালত হিসেবে তার গঠন, ক্ষমতা ও কার্যাবলির মাধ্যমে সংবিধান রক্ষা, আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ এবং নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
4. ভারতের রাষ্ট্রপতির জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত ক্ষমতাগুলি কী লেখো। [HS-2012, '10, '07]
উত্তর : ভারতীয় সংবিধানের অষ্টাদশ অধ্যায়ের (৩৫২, ৩৫৬ ও ৩৬০ নং ধারার ) মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির জরুরি ক্ষমতার বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে। নিচে আমি ভারতের রাষ্ট্রপতির জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত বিস্তারিত আলোচনা করছি -
ভারতের রাষ্ট্রপতির জরুরি অবস্থা সংক্রান্ত ক্ষমতা :
1. জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা : সংবিধানে ৩৫২ নং ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি যুদ্ধ, বহিরাক্রমণ বা অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহের পরিস্থিতিতে সমগ্র ভারত বা কোনো অংশের জন্য জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন।
অনুমোদন ও মেয়াদ : এই ঘোষণা পার্লামেন্টের উভয় কক্ষের অর্ধেক সদস্য এবং উপস্থিত ভোটদাতাদের দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন পেলে বৈধ হবে, অন্যথায় বাতিল হবে। জাতীয় জরুরি অবস্থা প্রথমে ৬ মাস পর্যন্ত থাকে, তবে প্রয়োজন হলে পার্লামেন্টের অনুমতিতে আরও ৬ মাস বাড়ানো যায়। এ পর্যন্ত রাষ্ট্রপতি তিনবার জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন।
2. রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা সংক্রান্ত ঘোষণা : সংবিধানের ৩৫৬ নং ধারা অনুযায়ী, যদি রাষ্ট্রপতি সন্তুষ্ট হন যে কোনো অঙ্গরাজ্যের প্রশাসন সংবিধানের নিয়ম অনুযায়ী সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে না, তাহলে তিনি সেই রাজ্যে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা বলবৎ করার ক্ষমতা রাখেন। এটি রাজ্যপালের রিপোর্ট বা অন্যান্য তথ্যের ভিত্তিতে করা যেতে পারে।
অনুমোদন ও মেয়াদ : এই ঘোষণার ২ মাসের মধ্যে পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে পৃথকভাবে অনুমোদন প্রয়োজন। অনুমোদিত হলে জরুরি অবস্থা প্রথমে ৬ মাস পর্যন্ত থাকে, পরে পার্লামেন্টের অনুমতিতে ৩ বছর পর্যন্ত বাড়ানো যায়। যদি অনুমোদন না হয়, তাহলে ঘোষণাটি ২ মাস পর অকার্যকর হয়ে যায়। বিভিন্ন রাজ্যে ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে এটি বহুবার প্রয়োগ হয়েছে।
3. আর্থিক জবুরি অবস্থা ঘোষণা : সংবিধানের ৩৬০ নং ধারা অনুযায়ী, যদি দেশের সমস্ত অংশে বা কোনো অংশে অর্থনৈতিক বিপর্যয় বা আর্থিক সুনাম নষ্টের পরিস্থিতি দেখা দেয়, রাষ্ট্রপতি আর্থিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন।
অনুমোদন ও মেয়াদ : এই ঘোষণার ২ মাসের মধ্যে পার্লামেন্টের উভয় কক্ষে অনুমোদন প্রাপ্ত হতে হবে, না হলে ঘোষণা বাতিল হবে। অনুমোদিত হলে আর্থিক জরুরি অবস্থা অনির্দিষ্টকালের জন্য জারি রাখা যায়। উল্লেখ্য, ভারতে এ পর্যন্ত এটি একবারও প্রয়োগ করা হয়নি।
উপসংহার : দেশের শাসনব্যবস্থা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রপতির জরুরি ক্ষমতা ও জরুরি অবস্থা সম্পর্কিত বিধিব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ। এটি অচলাবস্থা, যুদ্ধ বা অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় সরকারের কার্যকর ব্যবস্থা নিশ্চিত করে।
5. ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মন্ত্রীসভার সম্পর্ক আলোচনা করো। [HS-2013, '08]
অথবা,
মন্ত্রীপরিষদের নেতা হিসেবে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা আলোচনা করো। [HS-2011]
উত্তর : সংবিধানের ধারা ৭৪ নং অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী হলেন মন্ত্রীপরিষদের নেতা এবং মন্ত্রীসভার প্রধান ভিত্তি। প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভা ও ক্যাবিনেটের প্রধান নিয়ন্ত্রক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এখন আমি নিচে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মন্ত্রীসভার সম্পর্ক আলোচনা করছি -
প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীসভার সম্পর্ক :
1. মন্ত্রীসভায় মন্ত্রীদের নিয়োগ : মন্ত্রীসভা গঠনে প্রধানমন্ত্রীই প্রধান ভূমিকা পালন করেন। অন্যান্য মন্ত্রীদের নিযুক্ত রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে হয় [ধারা ৭৫(১)]। তবে প্রধানমন্ত্রী তাদের নিয়োগে সম্পূর্ণ স্বাধীন নন; তাঁকে কিছু বিষয় বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হয়, যেমন- i. দলের নেতৃস্থানীয় সদস্যরা মন্ত্রীসভায় স্থান পাচ্ছেন কি না। ii. সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে দলের প্রতিনিধিরা মন্ত্রীত্ব পাচ্ছেন কি না।
2. মন্ত্রীসভা পুনর্গঠন : মন্ত্রীসভার প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীদের মধ্যে দফতর বণ্টন, পুনর্বণ্টন ও পরিবর্তনের ক্ষমতা রাখেন। প্রধানমন্ত্রী চাইলে মন্ত্রীসভার রদবদল করতে পারেন, ফলে মন্ত্রীরা সর্বদাই তাঁর অনুগত থাকেন এবং মন্ত্রীসভার সমস্ত কাজকর্ম তাঁর নির্দেশে পরিচালিত হয়।
3. মন্ত্রীসভার বিভিন্ন দফতরের মধ্যে সংযোগসাধন : প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রপতি ও মন্ত্রীপরিষদের মধ্যে সংযোগকারীর ভূমিকা পালন করেন। তিনি মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রপতির কাছে পৌঁছে দেন এবং রাষ্ট্রপতির নির্দেশ বা বার্তা মন্ত্রীপরিষদকে জানান।
4. মন্ত্রীসভার সভাপতি হিসেবে ভূমিকা : প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রীসভার সভাপতি হিসেবে কাজ করেন এবং ‘ক্যাবিনেট তোরণের ভিত্তিপ্রস্তর’ হিসেবে পরিচিত। তিনি মন্ত্রীসভার বৈঠক আহবান ও কর্মসূচি নির্ধারণ করেন। প্রয়োজন হলে ঘনিষ্ঠ মন্ত্রীদের নিয়ে যেকোনো দিন বা একাধিকবার বৈঠক ডাকতে পারেন। এছাড়া তাঁর অনুমোদন ছাড়া কোনো বিষয়সূচি ক্যাবিনেটে আলোচনার জন্য অন্তর্ভুক্ত করা যায় না।
উপসংহার : মন্ত্রীসভার সব সদস্যকে প্রধানমন্ত্রী সমানভাবে গুরুত্ব দেন না। তিনি বিশেষ কিছু মন্ত্রীকে পরামর্শের জন্য বেছে নেন এবং তাঁদের নিয়ে অভ্যন্তরীণ ক্যাবিনেট বা ‘কোর গ্রুপ’ গঠন করেন। এ থেকে বোঝা যায়, ভারতের সংসদীয় ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রী কেবল সমপর্যায়ভুক্ত মন্ত্রীদের মধ্যে অগ্রগণ্য নন, বরং মন্ত্রিসভার নেতৃত্বে স্বতন্ত্র অবস্থান রাখেন। ড. আম্বেদকরের মতে, প্রধানমন্ত্রী ‘ক্যাবিনেট তোরণের প্রধান স্তম্ভ’,বলে অভিমত। যা বর্তমান ভারতের শাসন কাঠামোর প্রেক্ষাপটে সত্য প্রমাণিত হয়।
🔹 লেখকের শেষ মন্তব্য :
দ্বাদশ শ্রেণির চতুর্থ সেমিষ্টার রাষ্ট্রবিজ্ঞানের চতুর্থ অধ্যায় "ভারত সরকারের বিভিন্ন বিভাগসমূহ" থেকে 6 নম্বর মানের আরো অনেকগুলি খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর আছে। সেগুলি পেতে হলে আমাদের WB Semester Team প্রকাশিত দ্বাদশ শ্রেণির চতুর্থ সেমিস্টার সাজেশন ই-বুকগুলি (PDF) নিতে হবে। সাজেশন ই-বুক সম্পর্কে জানতে Menu Option এ ক্লিক করো বা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
File Details :
PDF Name : ক্লাস 12 ভারত সরকারের বিভিন্ন বিভাগসমূহ PDF
Size : 1 MB
No. of Pages : 2
Mode : Read-only (Online)
আরো পড়ুন | প্রশ্নোত্তর |
---|---|
1. প্রথম অধ্যায় : আন্তর্জাতিক সম্পর্ক PDF | Click here |
2. দ্বিতীয় অধ্যায় : প্রধান আঞ্চলিক সংগঠনসমূহ PDF | Click here |
3. ডাকঘর নাটকের প্রশ্ন উত্তর PDF | Click here |
4. তৃতীয় অধ্যায় : বিশ্বায়ন PDF | Click here |
WB Semester Team
📞 & 💬 9883566115