নানা রঙের দিন নাটকের প্রশ্ন উত্তর PDF
🔹 নানা রঙের দিন নাটকের বড় প্রশ্ন উত্তর PDF
[প্রতিটি প্রশ্নের মান ৫]
1. "অভিনেতা মানে একটা চাকর-একটা জোকার, একটা ক্লাউন। লোকেরা সারাদিন খেটেখুটে এলে তাদের আনন্দ দেওয়াই হল নাটক-ওয়ালাদের একমাত্র কর্তব্য"- বক্তার কথার তাৎপর্য আলোচনা করো। [HS Model Question] 5
উত্তর : বাংলা সাহিত্যের নাট্যকার অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'নানা রঙের দিন' নাটক থেকে উদ্ধৃতাংশটি নেওয়া হয়েছে।
বক্তার কথার তাৎপর্য : এই নাটকে রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় একজন বৃদ্ধ অভিনেতা হিসেবে নিজের জীবনের শেষ পর্বে অভিনয়ের সামাজিক মর্যাদা নিয়ে গভীর হতাশায় আক্রান্ত। একসময় তিনি পুলিশের চাকরি ছেড়ে পুরো মন দিয়ে অভিনয়কে নিয়েছিলেন। অনেক খ্যাতিও পেয়েছিলেন, কিন্তু এই খ্যাতি মঞ্চের বাইরে স্থায়ী হয়নি। সমাজ অভিনেতাকে কখনো সত্যিকারের গ্রহণ করে না। তাঁর একমাত্র প্রেমও কোনো পরিণতি পায়নি, কারণ থিয়েটার ছেড়ে দেওয়ার শর্ত আরোপ করা হয়েছিল। রজনীকান্ত উপলব্ধি করেন, যাঁরা নাট্যাভিনয়কে পবিত্র শিল্প বলে, তাঁরা মিথ্যে কথা বলেন। অভিনেতার কাজ কেবল দর্শকদের আনন্দ দেওয়াই সীমাবদ্ধ। মঞ্চের বাইরে সমাজ তাকে ‘থিয়েটারওয়ালা’ বা ‘অস্পৃশ্য ভাঁড়’ হিসেবে দেখে। তার সঙ্গে কোনো বৈবাহিক সম্পর্ক বা সামাজিক সম্মান নেই। জীবনভর এই উপলব্ধি রজনীকান্তের। নাটকটি দেখায় একজন শিল্পীর সংগ্রাম, খ্যাতি এবং সমাজের প্রকৃত বোধের মধ্যে বৈপরীত্য।
2. 'নানা রঙের দিন' নাটক অবলম্বনে রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের চরিত্র বিশ্লেষণ করো। [HS Model Question] 5
উত্তর : বাংলা সাহিত্যের নাট্যকার অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাটক ‘নানা রঙের দিন’-এ রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের চরিত্র নাটকের মূল কেন্দ্রবিন্দু। প্রায় আটষট্টি বছরের বৃদ্ধ এই অভিনেতা ব্যক্তিগত জীবন ও অভিনয়জীবনের দ্বন্দ্বের মাধ্যমে সমাজে একজন থিয়েটার অভিনেতার অবস্থান তুলে ধরেন। আমি এখন নিচে তার চরিত্র সম্পর্কে আলোচনা করছি -
রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের চরিত্র বিশ্লেষণ :
(ক) অভিনয়ের প্রতি নিবেদন : রজনীকান্ত জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হিসেবে পুলিশের চাকরি ছেড়ে অভিনয়কে সর্বস্ব করেছেন। তাঁর সমস্ত আনন্দ ও সংগ্রাম মঞ্চে অভিনয় করার মধ্য দিয়ে প্রকাশ পায়, যা তার শিল্পপ্রেমকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে।
(খ) ব্যক্তিগত ত্যাগ : অভিনয়ের জন্য রজনীকান্ত প্রেমিকাকে হারান। ব্যক্তিগত জীবনের এই ত্যাগ প্রমাণ করে যে, তার জীবন এবং অভিনয় অভিন্নভাবে সংযুক্ত, যেখানে ব্যক্তিগত সুখ প্রায়শই পিছনে থাকে।
(গ) সমাজের অবজ্ঞা ও একাকিত্ব : তিনি বুঝতে পারেন যে সমাজ থিয়েটার অভিনেতাকে কখনো সত্যিকারভাবে গ্রহণ করে না। মঞ্চের বাইরে মানুষ তাকে ‘থিয়েটারওয়ালা’ বা ‘অস্পৃশ্য ভাঁড়’ হিসেবে দেখে, যা তার একাকিত্ব ও হতাশাকে আরও গভীর করে।
(ঘ) স্মৃতির মধ্যে আনন্দ : বৃদ্ধ বয়সে তিনি পুরোনো নাটকের সংলাপ এবং স্মৃতির মধ্যে আনন্দ খুঁজে নেন। ‘রিজিয়া’ বা ‘সাজাহান’ নাটকের সংলাপের মধ্য দিয়ে তিনি নিজেকে জীবিত রাখার চেষ্টা করেন, যা তার আবেগময় ও প্রতিফলিত চরিত্রকে নির্দেশ করে।
(ঙ) রিত্রের দ্বৈততা : ব্যক্তি রজনীকান্ত ও অভিনেতা রজনীকান্ত দুই জীবনের মধ্যে সমন্বয় নাটকটির মূল ভাব। ব্যক্তিগত দুঃখ ও অভিনয়জীবনের আনন্দ একই সুতোয় গাঁথা, যা তার চরিত্রকে বহুমাত্রিক ও গভীরভাবে ফুটিয়ে তোলে।
উপসংহার : রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের চরিত্র নাটকে একজন থিয়েটার অভিনেতার ব্যক্তিগত ও সামাজিক সংগ্রামের আয়না। অভিনয়ের প্রতি তার নিবেদন, একাকিত্ব, এবং সমাজের স্বীকৃতি না পাওয়ার অনুভূতি চরিত্রটিকে গভীর ও বাস্তবধর্মী করে তোলে।
3. "আমাদের দিন ফুরিয়েছে!"- কে, কোন্ প্রসঙ্গে এই উক্তি করেছেন ? বক্তার এই উপলব্ধির কারণ বিশ্লেষণ করো। [2+3]
উত্তর : বাংলা সাহিত্যের নাট্যকার অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'নানা রঙের দিন' নাটক থেকে উদ্ধৃতাংশটি নেওয়া হয়েছে।
"আমাদের দিন ফুরিয়েছে!"-বক্তা হলেন প্রবীণ অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়। জীবনের শেষ পর্যায়ে তিনি বুঝতে পারেন যে তাঁর অভিনয়ের খ্যাতি এবং দক্ষতা ধীরে ধীরে কমছে। নায়ক চরিত্র থেকে তিনি এখন পার্শ্বচরিত্রের অভিনেতা মাত্র, এই নেতিবাচক অনুভূতি থেকে তাঁর মনে তীব্র হতাশার জন্ম নেয়। এই কারণেই তিনি প্রম্পটার কালীনাথ সেনকে উদ্দেশ্য করে মন্তব্যটি বলেন।
বক্তার এই উপলব্ধির কারণ : মধ্যরাতে শূন্য প্রেক্ষাগৃহে মঞ্চে দাঁড়িয়ে, অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায় স্মৃতিতে ভেসে ওঠেন তাঁর অভিনয় জীবনের গৌরবোজ্জ্বল অতীতে। একসময় তিনি অভিনয়ের জন্য নিজের একমাত্র প্রেম ভেঙে দিয়েছিলেন, কারণ অভিনয়ই ছিল তাঁর জীবনের মূল অবলম্বন। অতীতের দিনগুলোতে তিনি অনায়াসে ফুটিয়ে তুলতেন 'রিজিয়া' নাটকে বক্তিয়ারের চরিত্র বা 'সাজাহান' নাটকে ঔরঙ্গজেবের চরিত্র। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গলার শক্তি কমে যাওয়ায় নতুন চরিত্রে নিজের দক্ষতাও হারিয়েছেন তিনি। "...থিয়েটারের দেওয়ালে... লিখে দিয়ে গেল প্রাক্তন অভিনেতা রজনী চাটুজ্জের প্রতিভার অপমৃত্যুর করুণ সংবাদ!"। পুরোনো দিনের স্মৃতি ভাবতে ভাবতে, বিভিন্ন চরিত্রের পুনরাভিনয় করতে করতে, তিনি অনুভব করেন যে জীবনের মঞ্চ এখন শূন্যতায় পরিপূর্ণ।
4. 'নানা রঙের দিন' নাটকের সংলাপ সৃষ্টিতে নাট্যকারের দক্ষতা আলোচনা করো। [5]
উত্তর : অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'নানা রঙের দিন' নাটকে সংলাপ ব্যবহার করে চরিত্রের মনস্তত্ত্ব ও জীবনের বিভিন্ন স্তর ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। বিশেষ করে অভিনেতা রজনীকান্ত চট্টোপাধ্যায়ের হতাশা এবং অতীতের স্মৃতিচারণের মাধ্যমে নাট্যকারের দক্ষতা স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
'নানা রঙের দিন' নাটকের সংলাপ সৃষ্টিতে নাট্যকারের দক্ষতা :
(ক) নাট্যকার দীর্ঘ বক্তৃতাধর্মী সংলাপ ব্যবহার করেছেন, যা চরিত্রের মানসিক অবস্থা প্রকাশ করে। দর্শকশূন্য অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহেও অভিনেতার নেশাগ্রস্ত মনস্তত্ত্ব এবং নিজের নিয়ন্ত্রণ হারানোর বিষয়টি স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে।
(খ) অসঙ্গত এবং এলোমেলো সংলাপের মধ্যে হিন্দি সংলাপ প্রয়োগ করে নাট্যকার চরিত্রকে আরও বাস্তবধর্মী করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, "বাঃ বাঃ বুঢ্ঢা। আচ্ছাহি কিয়া।" সংলাপটি চরিত্রের মানসিক অবস্থাকে জীবন্ত করে তোলে।
(গ) সংলাপের ভিতরে সংলাপ নির্মাণের মাধ্যমে নাট্যকার রজনীকান্তের বিবেকের কথা প্রকাশ করেছেন। নিজের বক্তব্য বলতে বলতে চরিত্রটি নিজের ভিতরের দ্বন্দ্বও ফুটিয়ে তুলেছে, যা নাটকের গভীরতা বৃদ্ধি করে।
(ঘ) একই সংলাপের মধ্যে দুটি বিপরীত চেতনাধর্মিতা তৈরি করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, "মাইরি, এই না হলে অ্যাকটিং।" কথ্যবুলি চরিত্রের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বকে দৃঢ়ভাবে ফুটিয়ে তোলে।
(ঙ) রজনীকান্তের যন্ত্রণার প্রকাশে ভাষায় গাম্ভীর্য সৃষ্টি করেছেন নাট্যকার। "একেবারে নিঃসঙ্গ... ধু-ধু করা দুপুরে জ্বলন্ত মাঠে বাতাস যেমন একা-যেমন সঙ্গীহীন..." সংলাপটি চরিত্রের অবস্থা এবং বিষয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নাটককে অনন্য মাত্রা দিয়েছে।
উপসংহার : অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংলাপ সৃষ্টিতে দক্ষতা স্পষ্ট। দীর্ঘ, অসংলগ্ন ও সংলাপের ভিতরে সংলাপ ব্যবহার করে তিনি চরিত্রের হতাশা, অতীতের স্মৃতি এবং দ্বন্দ্বকে বাস্তবসম্মতভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। সুতরাং 'নানা রঙের দিন'-এর সংলাপ নাটকে অনন্য মাত্রা পেয়েছে।
5. "আমি রোজ লুকিয়ে লুকিয়ে গ্রিনরুমে ঘুমোই চাটুজ্জে মশাই- কেউ জানে না"- বক্তা কে? তিনি কেন গ্রিনরুমে ঘুমান? [1+4]
উত্তর : বাংলা সাহিত্যের নাট্যকার অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের 'নানা রঙের দিন' নাটক থেকে উদ্ধৃতাংশটি নেওয়া হয়েছে। উদ্ধৃতিটির বক্তা হলেন থিয়েটারের প্রম্পটার কালীনাথ সেন।
গ্রিনরুমে ঘুমানোর কারণ : প্রায় ষাট বছর বয়সি বৃদ্ধ কালীনাথ সেন ময়লা পাজামা পরে, কালো চাদর গায়ে দিয়ে, এলোমেলো চুল নিয়ে গভীর রাতে মঞ্চে প্রবেশ করেন। নেশাগ্রস্ত রজনীকান্ত তাঁকে দেখে অবাক হলে কালীনাথ প্রশ্নের উত্তর দেন। পরে হতদরিদ্র প্রম্পটার কালীনাথ রজনীকান্তকে জানান কেন তিনি গ্রিনরুমে ঘুমান। কালীনাথের কোনো শোয়ার জায়গা নেই, তাই তিনি রাতে থিয়েটার-হলের গ্রিনরুমে ঘুমান। এই গোপন বিষয় কেউ জানে না। যদি থিয়েটার-মালিক জানতে পারেন, তাহলে কালীনাথ 'একেবারে বেঘোরে মারা' পড়বেন। তাই তিনি রজনীকান্তকে অনুরোধ করেন মালিককে এটি না জানানোর জন্য।
🔹 লেখকের শেষ মন্তব্য :
'নানা রঙের দিন' নাটক থেকে আরও অনেকগুলি খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর আছে। সেগুলি পেতে হলে আমাদের WB Semester Team প্রকাশিত দ্বাদশ শ্রেণির চতুর্থ সেমিস্টার সাজেশন ই-বুকগুলি (PDF) সংগ্রহ করতে হবে।
File Details :
PDF Name : 'নানা রঙের দিন' নাটকের প্রশ্ন উত্তর PDF
Size : 1 MB
No. of Pages : 2
Download Link : Coming Soon
আরো পড়ুন | প্রশ্নোত্তর |
---|---|
1. 'কেন এল না' কবিতার প্রশ্ন উত্তর PDF | Click here |
2. ডাকঘর নাটকের প্রশ্ন উত্তর PDF | Click here |
3. বাঙালির চলচ্চিত্রের ইতিহাস PDF | Click here |
4. হারুন সালেমের মাসি গল্পের প্রশ্ন উত্তর PDF | Click here |
WB Semester Team
📞 & 💬 9883566115