🔹 দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষাবিজ্ঞান দ্বিতীয় অধ্যায় প্রশ্ন ও উত্তর
[প্রতিটি প্রশ্নের মান 10]
1. প্রাচীন অনুবর্তন কাকে বলে ? শিক্ষাক্ষেত্রে প্রাচীন অনুবর্তন এর গুরুত্ব লেখো।
অথবা, প্রাচীন অনুবর্তন কাকে বলে ? শিক্ষাক্ষেত্রে ধ্রুপদি অনুবর্তনের (প্রাচীন অনুবর্তনের) গুরুত্ব বা উপযোগিতা লেখো।
উত্তর : প্রাচীন অনুবর্তন তত্ত্বের প্রবর্তক হলেন শারীরতত্ত্ববিদ আইভ্যান প্যাভলভ। তাঁর মতে, প্রাণী স্বাভাবিক উদ্দীপকের উপস্থিতিতে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করে। তবে নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে কৃত্রিম উদ্দীপক ব্যবহার করেও একই ধরনের প্রতিক্রিয়া ঘটানো সম্ভব। স্বাভাবিক উদ্দীপকের পরিবর্তে কৃত্রিম উদ্দীপকের দ্বারা স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করাকেই প্রাচীন অনুবর্তন বলা হয়।
শিক্ষাক্ষেত্রে ধ্রুপদি (প্রাচীন) অনুবর্তনের গুরুত্ব / উপযোগিতা : প্যাভলভের প্রাচীন অনুবর্তন তত্ত্বের মাধ্যমে দেখা যায় যে শুধু প্রাণীই নয়, মানবশিশুও এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অনেক কিছু শেখে। তাই শিক্ষাক্ষেত্রে এই তত্ত্বের বিভিন্ন গুরুত্ব বা উপযোগিতা লক্ষ্য করা যায়, যা নিচে আলোচনা করা হল-
(১) শিশুর ভাষাগত বিকাশে সহায়ক : ধ্রুপদি অনুবর্তনের মাধ্যমে শিশুরা খুব সহজে নতুন শব্দ, বাক্য ও ভাষার ব্যবহার শিখতে পারে। কোনো নির্দিষ্ট শব্দ বা বস্তুর সঙ্গে শব্দকে বারবার যুক্ত করলে শিশুর মনে সেই শব্দটি স্থায়ীভাবে বসে যায়। যেমন - শিশুকে বারবার “ঠাকুরমা” শব্দটি উচ্চারণ করে দেখালে এবং তাকে অনুকরণ করতে বললে, শিশু ধীরে ধীরে শব্দটির অর্থ ও ব্যবহার বুঝে ফেলে। এইভাবে শিশুর ভাষা শেখা সহজ ও স্বাভাবিক হয়।
(২) অভ্যাস গঠনে সাহায্য করে : শিশুর জীবনে ভালো অভ্যাস তৈরি করার ক্ষেত্রে প্রাচীন অনুবর্তন বিশেষভাবে কার্যকর। কোনো কাজ যদি নির্দিষ্ট উদ্দীপকের সঙ্গে বারবার যুক্ত করা হয়, তবে তা ধীরে ধীরে শিশুর অভ্যাসে পরিণত হয়। যেমন - সকালবেলায় ঘুম থেকে ওঠা, নিয়মিত দাঁত মাজা, নির্দিষ্ট সময়ে পড়াশোনা করা ইত্যাদি অভ্যাস অনুবর্তনের মাধ্যমে সহজে গড়ে ওঠে।
(৩) শিখনদক্ষতা বৃদ্ধি : লেখা, পড়া, বানান শেখা বা নামতা মুখস্থ করার মতো শিক্ষণ কার্যক্রমে ধ্রুপদি অনুবর্তনের প্রভাব স্পষ্টভাবে দেখা যায়। একই উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার পুনরাবৃত্তির ফলে শিশুর শিখন দক্ষতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। এই প্রক্রিয়ায় শিশু শেখার কাজে আত্মবিশ্বাস অর্জন করে এবং পড়াশোনায় আগ্রহী হয়।
(৪) কু-অভ্যাস দূরীকরণ : শিশুদের মধ্যে গড়ে ওঠা খারাপ অভ্যাস দূর করার ক্ষেত্রেও প্রাচীন অনুবর্তন সহায়ক। অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের সঙ্গে নেতিবাচক উদ্দীপক যুক্ত করলে সেই আচরণ ধীরে ধীরে কমে যায়। যেমন - অশ্লীল শব্দ ব্যবহার, মুদ্রাদোষ বা বানান ভুলের মতো কু-অভ্যাস ধীরে ধীরে দূর করা সম্ভব।
(৫) প্রাক্ষোভিক বিকাশে সাহায্য : শিশুর ভয়, উদ্বেগ বা মানসিক অস্থিরতা কমাতে ধ্রুপদি অনুবর্তন কার্যকর ভূমিকা পালন করে। উপযুক্ত উদ্দীপকের মাধ্যমে শিশুর মানসিক প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এর ফলে শিশুর প্রাক্ষোভিক বিকাশ সুস্থ ও স্বাভাবিক হয়।
(৬) আগ্রহ বা অনাগ্রহ সৃষ্টি : শিক্ষার্থীর কোনো বিষয়ের প্রতি আগ্রহ বা অনাগ্রহ অনেকাংশে অনুবর্তনের ফল। শিক্ষক যেভাবে পড়ান এবং শ্রেণিকক্ষের পরিবেশ যেমন হয়, তার সঙ্গে বিষয়টির প্রতি শিক্ষার্থীর মনোভাব যুক্ত হয়ে যায়। ফলে কোনো বিষয় ভালো লাগা বা অপছন্দ হওয়া তৈরি হয়।
(৭) শিক্ষকের আচরণ শিক্ষার্থীর মধ্যে অনুকরণযোগ্য হয় : শিক্ষকের আচরণ, কথা বলার ভঙ্গি, পোশাক ও অভ্যাস শিক্ষার্থীরা অনুকরণ করে। ধ্রুপদি অনুবর্তনের ফলে এই আচরণগুলি শিক্ষার্থীর মধ্যে স্থায়ী হয়ে যায়। তাই শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আচরণ মার্জিত, শালীন ও অনুকরণযোগ্য হওয়া খুবই প্রয়োজন।
(৮) ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য প্রভাবশালী : শৈশবকালে অর্জিত অভ্যাস, মনোভাব ও আচরণ ভবিষ্যৎ জীবনেও প্রভাব ফেলে। প্রাচীন অনুবর্তনের মাধ্যমে গড়ে ওঠা শিখন ও আচরণ শিশুর ব্যক্তিত্ব গঠনে সাহায্য করে। এই কারণে শিক্ষা ও সামাজিক জীবনে এর গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি।
উপসংহার : অপানুবর্তন প্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা থাকলে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। ধ্রুপদি অনুবর্তন শিক্ষাক্ষেত্রে ভাষা শিক্ষা, অভ্যাস গঠন, শিখনদক্ষতা ও সামাজিক আচরণ বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই বলা যায়, প্রাচীন অনুবর্তন তত্ত্ব শিক্ষা ক্ষেত্রে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ও কার্যকর।
2. প্রাচীন অনুবর্তনের ধারণাটি ব্যাখ্যা করো। প্রাচীন অনুবর্তন সংক্রান্ত প্যাভলভের পরীক্ষাটি বর্ণনা করো। [HS-2025, '10, '07]
উত্তর : শিখনের ক্ষেত্রে উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের প্রক্রিয়াকে অনুবর্তন বলা হয়। এই অনুবর্তনের প্রাথমিক ও মৌলিক রূপটি প্রথম বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যা করেন রাশিয়ান শারীরতত্ত্ববিদ আইভান প্যাভলভ। তাঁর পরীক্ষার মাধ্যমে যে অনুবর্তন প্রক্রিয়ার ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়, তাকেই প্রাচীন অনুবর্তন বলা হয়।
প্রাচীন অনুবর্তন : প্যাভলভের মতে, প্রাণীর ক্ষেত্রে স্বাভাবিক উদ্দীপকের উপস্থিতিতে যে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়, সেই একই প্রতিক্রিয়া যদি কোনো কৃত্রিম উদ্দীপকের সাহায্যে সৃষ্টি করা যায়, তবে সেই শিখন প্রক্রিয়াকে প্রাচীন অনুবর্তন বলা হয়।
অর্থাৎ স্বাভাবিক উদ্দীপকের পরিবর্তে কৃত্রিম উদ্দীপক দ্বারা স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া ঘটানোই হল প্রাচীন অনুবর্তনের মূল কথা।
প্রাচীন অনুবর্তন সংক্রান্ত প্যাভলভের পরীক্ষা :
পরীক্ষার প্রস্তুতি : প্যাভলভ পরীক্ষার আগে একটি কুকুরকে কয়েক সপ্তাহ ধরে প্রশিক্ষণ দেন। পরীক্ষার সময় কুকুরটিকে ক্ষুধার্ত অবস্থায় রাখা হয়, যাতে খাদ্যবস্তুর প্রতি তার স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া স্পষ্টভাবে দেখা যায়।
পরীক্ষার প্রথম ধাপ : কুকুরটির সামনে খাদ্যবস্তু রাখা হলে স্বাভাবিকভাবেই তার মুখে লালাক্ষরণ শুরু হয়। এখানে খাদ্যবস্তু হল স্বাভাবিক উদ্দীপক এবং লালাক্ষরণ হল স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া।
পরীক্ষার দ্বিতীয় ধাপ : এরপর প্যাভলভ প্রতিদিন খাদ্য উপস্থাপনের আগে কিছু সময় ধরে ঘণ্টাধ্বনি করেন এবং ঘণ্টাধ্বনি শেষ হওয়ার ঠিক পূর্বমুহূর্তে খাদ্যবস্তু দেন। এই ক্ষেত্রে ঘণ্টাধ্বনি হল কৃত্রিম উদ্দীপক।
প্রথমদিকে ঘণ্টাধ্বনির ফলে কুকুরটি শুধু সজাগ হয়ে ওঠে। এই সজাগ অবস্থাই হল ঘণ্টাধ্বনির প্রতি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া।
পরীক্ষার পুনরাবৃত্তি ও ফলাফল : এই ঘটনার বারবার পুনরাবৃত্তির ফলে দেখা যায় যে, খাদ্য দেওয়ার আগেই শুধুমাত্র ঘণ্টাধ্বনি শুনেই কুকুরটির মুখে লালাক্ষরণ শুরু হচ্ছে। অর্থাৎ কৃত্রিম উদ্দীপক ঘণ্টাধ্বনি খাদ্যবস্তুর কাজ করতে শুরু করেছে। এই লালাক্ষরণের পরিমাণ প্যাভলভ কাইমোগ্রাফ যন্ত্রের সাহায্যে পরিমাপ করেন।
সিদ্ধান্ত : এই পরীক্ষা থেকে প্যাভলভ সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে, স্বাভাবিক উদ্দীপক খাদ্যবস্তুর পরিবর্তে কৃত্রিম উদ্দীপক ঘণ্টাধ্বনির মাধ্যমেও স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করা সম্ভব। এই প্রক্রিয়াটিকেই তিনি প্রাচীন অনুবর্তন নামে অভিহিত করেন।
উপসংহার : অতএব বলা যায়, প্যাভলভের পরীক্ষার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে কৃত্রিম উদ্দীপকের সাহায্যে প্রাণীর স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করা সম্ভব। এই অনুবর্তন প্রক্রিয়াই শিখনের ক্ষেত্রে প্রাচীন অনুবর্তন নামে পরিচিত এবং এটি আধুনিক শিখন তত্ত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি।
3. থর্নডাইকের শিখনের মূল সূত্রগুলি কী কী? শিক্ষাক্ষেত্রে মূলসূত্রগুলির গুরুত্ব আলোচনা করো।
উত্তর : আমেরিকান মনোবিদ এডওয়ার্ড লি থর্নডাইক শিখন সম্পর্কে গবেষণার মাধ্যমে শিখনের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র প্রস্তাব করেন। তিনি শিখনের সূত্রগুলিকে মোট ৩টি মুখ্য সূত্র ও ৫টি গৌণ সূত্রে ভাগ করেন। প্রধান বা মুখ্য তিনটি সূত্র হল- (a) ফললাভের সূত্র, (b) অনুশীলনের সূত্র, (c) প্রস্তুতির সূত্র
প্রধান বা মুখ্য সূত্রসমূহ :
[১] ফললাভের সূত্র : এই সূত্র অনুযায়ী, কোনো উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে যে সংযোগ তৈরি হয়, তার ফল যদি শিক্ষার্থী বা প্রাণীর কাছে আনন্দদায়ক ও তৃপ্তিদায়ক হয়, তবে সেই সংযোগ আরও শক্তিশালী হয়। আর যদি সেই ফল বিরক্তিকর বা অসন্তোষজনক হয়, তবে সেই সংযোগ ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যায়।
শিক্ষাক্ষেত্রে ফললাভের সূত্রের গুরুত্ব :
(i) পাঠ্যবিষয় তৃপ্তিদায়ক হলে শিখন সহজ হয় : থর্নডাইকের ফললাভের সূত্র অনুযায়ী, কোনো কাজের ফল যদি শিক্ষার্থীর কাছে আনন্দদায়ক হয়, তবে সে কাজটি করতে আগ্রহী হয়। পাঠ্যবিষয় সহজ ও বোধগম্য হলে শিক্ষার্থীর মনোযোগ বাড়ে এবং শিখন প্রক্রিয়া আনন্দের সঙ্গে সম্পন্ন হয়।
(ii) পুরস্কার, প্রশংসা ও উৎসাহ শিখনকে দৃঢ় করে তোলে : পুরস্কার ও প্রশংসা শিক্ষার্থীর কাছে তৃপ্তিদায়ক ফল হিসেবে কাজ করে। এতে শিক্ষার্থী আরও ভালোভাবে শেখার চেষ্টা করে এবং শিখিত আচরণ স্থায়ী হয়।
(iii) ব্যর্থতার জন্য তিরস্কার না করে উৎসাহ দেওয়া প্রয়োজন : তিরস্কার বা শাস্তি শিক্ষার্থীর মনে ভয় সৃষ্টি করে এবং শিখনের আগ্রহ কমায়। তাই ব্যর্থ হলেও শিক্ষার্থীকে উৎসাহ ও সহানুভূতির মাধ্যমে এগিয়ে যেতে সাহায্য করা উচিত।
[2] অনুশীলনের সূত্র : থর্নডাইকের অনুশীলনের সূত্র অনুযায়ী, উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে যে সংযোগ বারবার অনুশীলনের মাধ্যমে গড়ে ওঠে, তা ধীরে ধীরে শক্তিশালী হয়। এই সূত্রের প্রথম অংশকে বলা হয় ব্যবহার সূত্র, অর্থাৎ কোনো কাজ যত বেশি করা হয়, তত বেশি তা শেখা যায়।
এই সূত্রের দ্বিতীয় অংশকে বলা হয় অব্যবহার সূত্র। অর্থাৎ দীর্ঘদিন কোনো কাজ অনুশীলন না করলে উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে তৈরি হওয়া সংযোগ ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যায় এবং একসময় ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়।
শিক্ষাক্ষেত্রে অনুশীলনের সূত্রের গুরুত্ব :
(i) নিয়মিত অনুশীলন শিখনকে দৃঢ় করে : থর্নডাইকের অনুশীলনের সূত্র অনুযায়ী, কোনো বিষয় বারবার চর্চা করলে উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সংযোগ শক্তিশালী হয়। ফলে পড়া, লেখা, অঙ্ক বা বানান অনুশীলনের মাধ্যমে শিখন স্থায়ী হয়।
(ii) পুনরাবৃত্তি না হলে শিখন দুর্বল হয় : দীর্ঘদিন কোনো বিষয় চর্চা না করলে তা ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। তাই অব্যবহার সূত্র অনুযায়ী নিয়মিত অনুশীলন শিখনের জন্য অপরিহার্য।
(iii) অর্থবোধক অনুশীলন বেশি কার্যকর : শুধু মুখস্থ নয়, বিষয়বস্তুর অর্থ বুঝে অনুশীলন করলে শিখন বেশি ফলপ্রসূ হয়। কোথায় ও কীভাবে বিষয়টি ব্যবহার করতে হবে তা জানলে শিক্ষার্থীর দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
[3] প্রস্তুতির সূত্র : থর্নডাইকের প্রস্তুতির সূত্র অনুযায়ী, কোনো প্রাণী বা ব্যক্তি যখন মানসিকভাবে শেখার জন্য প্রস্তুত থাকে, তখন উদ্দীপক ও প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সংযোগ ঘটলে সে আনন্দ ও তৃপ্তি অনুভব করে। কিন্তু যদি সে প্রস্তুত থাকা সত্ত্বেও শেখার সুযোগ না পায়, তাহলে বিরক্তি তৈরি হয়। আবার যখন কোনো ব্যক্তি শেখার জন্য প্রস্তুত নয়, সেই সময় জোর করে শেখাতে গেলে তার মনে বিরক্তি ও অনীহা সৃষ্টি হয়।
শিক্ষাক্ষেত্রে প্রস্তুতির সূত্রের গুরুত্ব :
(i) শিখন শিক্ষার্থীর প্রস্তুতির ওপর নির্ভরশীল : থর্নডাইকের প্রস্তুতির সূত্র অনুযায়ী, শিক্ষার্থী যদি শেখার জন্য মানসিক, দৈহিক ও প্রাক্ষোভিকভাবে প্রস্তুত থাকে, তবেই শিখন সহজ ও আনন্দদায়ক হয়।
(ii) প্রস্তুতি থাকলে শিখন তৃপ্তিদায়ক হয় : শিক্ষার্থী শেখার জন্য আগ্রহী ও প্রস্তুত থাকলে উদ্দীপক-প্রতিক্রিয়ার সংযোগ গঠিত হয় এবং শিখনের ফল তাকে সন্তুষ্ট করে।
(iii) প্রস্তুতি ছাড়া চাপ দিলে শিখন ব্যাহত হয় : শিক্ষার্থী প্রস্তুত না থাকলে জোর করে শেখালে বিরক্তি ও অনাগ্রহ সৃষ্টি হয়। তাই শিক্ষককে শিক্ষার্থীর মানসিক অবস্থা বুঝে পাঠদান করা উচিত।
উপসংহার : উপরের আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায় যে, থর্নডাইকের ফললাভের সূত্র, অনুশীলনের সূত্র ও প্রস্তুতির সূত্র, এই তিনটি মুখ্য সূত্র শিখন প্রক্রিয়াকে সহজ, কার্যকর ও স্থায়ী করে তোলে। শিক্ষাক্ষেত্রে এই সূত্রগুলি অনুসরণ করলে শিক্ষার্থীর আগ্রহ বৃদ্ধি পায়, শিখন আনন্দদায়ক হয় এবং শেখা বিষয় দীর্ঘদিন মনে থাকে। তাই শিক্ষাদানে থর্নডাইকের শিখনের মূল সূত্রগুলির গুরুত্ব অপরিসীম।
4. অপারেন্ট বা সক্রিয় অনুবর্তন বলতে কী বোঝো ? অপারেন্ট অনুবর্তনের বৈশিষ্ট্য ও শিক্ষাক্ষেত্রে সক্রিয় অনুবর্তনের গুরুত্ব লেখো।
উত্তর : যে ধরনের অনুবর্তনে কোনো নির্দিষ্ট উদ্দীপক আগে থেকে নির্ধারিত থাকে না এবং যেখানে প্রাণী নিজে সক্রিয় হয়ে আচরণ করে ও সেই আচরণের ফল অনুযায়ী শিখন ঘটে, তাকে অপারেন্ট বা সক্রিয় অনুবর্তন বলা হয়। এখানে প্রাণী নিজের চাহিদা পূরণের জন্য পরিবেশের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে কাজ করে এবং প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে। এই অনুবর্তনে প্রাণীর মানসিক সক্রিয়তা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অপারেন্ট বা সক্রিয় অনুবর্তনের বৈশিষ্ট্য :
1. প্রতিক্রিয়ার জন্য প্রস্তুতি : সক্রিয় অনুবর্তনে প্রাণীকে প্রতিক্রিয়া জানানোর আগে মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুত হতে হয়। স্কিনারের পরীক্ষায় দেখা যায়, ইঁদুরটি খাবার পাওয়ার জন্য আগে প্রস্তুতি নিয়ে তারপর বোতামে চাপ দেয়। এই প্রস্তুতিই তাকে সক্রিয় আচরণে উৎসাহিত করে।
2. প্রাণীর সক্রিয়তা : এই অনুবর্তনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল প্রাণীর সক্রিয় ভূমিকা। প্রাণী নিজে চেষ্টা করে, পরিবেশের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং সেই সক্রিয়তার মাধ্যমেই শিখন ঘটে।
3. প্রাণীর স্বতঃস্ফূর্ত আচরণ : এই অনুবর্তনে প্রাণীর আচরণ কোনো নির্দিষ্ট উদ্দীপকের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়। প্রাণী নিজে থেকেই নতুন আচরণ করে এবং সেই আচরণ তার প্রয়োজন মেটালে তা আবার পুনরাবৃত্তি করে।
4. শক্তিদায়ক সত্তার প্রভাব : এই অনুবর্তনে শক্তিদায়ক সত্তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শক্তিদায়ক সত্তা দুই প্রকার ধনাত্মক ও ঋণাত্মক। ধনাত্মক শক্তিদায়ক সত্তা (যেমন খাবার) আচরণকে শক্তিশালী করে, আর ঋণাত্মক শক্তিদায়ক সত্তা (যেমন শাস্তি) আচরণ কমিয়ে দেয়।
5. অবলুপ্তির ঘটনা : এই অনুবর্তনের ক্ষেত্রেও অবলুপ্তি দেখা যায়। যদি সঠিক আচরণ করার পরও শক্তিদায়ক উদ্দীপক না পাওয়া যায়, তবে সেই আচরণ ধীরে ধীরে কমে যায় বা বন্ধ হয়ে যায়।
6. সক্রিয় অনুবর্তনের পুনরাবির্ভাব : অবলুপ্তির পর যদি প্রাণীকে কিছু সময় বিশ্রাম দিয়ে আবার একই পরিস্থিতিতে আনা হয় এবং পুনরায় শক্তিদায়ক উদ্দীপক দেওয়া হয়, তবে আগের শেখা আচরণ আবার ফিরে আসে।
7. আচরণের স্থায়িত্ব : এই অনুবর্তনে অর্জিত আচরণের স্থায়িত্ব নির্ভর করে শক্তিদায়ক উদ্দীপক দেওয়ার নিয়মের ওপর। স্কিনার এই নিয়মকে ‘সিডিউল’ বলেছেন। তিনি চার ধরনের পুনঃসংযোজকের কথা উল্লেখ করেছেন-(i) প্রতিনিয়ত পুনঃসংযোজক, (ii) স্থায়ী সময় অন্তর পুনঃসংযোজক, (iii) স্থায়ী অনুপাতে পুনঃসংযোজক এবং (iv) চলক পুনঃসংযোজক।
শিক্ষাক্ষেত্রে সক্রিয় অনুবর্তনের গুরুত্ব :
1. শিক্ষার্থীর শিখনকে কার্যকর করে : শিক্ষক-শিক্ষিকারা শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে শেখার প্রক্রিয়াকে আরও ফলপ্রসূ ও কার্যকরি করে তোলে।
2. আগ্রহ ও স্থায়িত্ব সৃষ্টি করে : এই নীতি প্রয়োগ করে শিক্ষার্থীর নতুন নতুন আচরণের সঙ্গে সঙ্গে তাকে পুরস্কৃত করে আগ্রহ সৃষ্টি তার শিখন স্থায়ী বা দৃঢ় হয়।
3. প্রযুক্তিগত শিক্ষা ও কৌশলে সহায়ক : এই তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে CAI, Teaching Machine, প্রোগ্রাম লার্নিং ইত্যাদি শিক্ষণমূলক কৌশল তৈরি হয়েছে।
4. ব্যক্তিত্ব ও অভ্যাস বিকাশে সহায়ক : শিশুর ব্যক্তিত্ব গঠন, সুঅভ্যাস তৈরি এবং নতুন আচরণ শিখতে সহায়তা করে।
উপসংহার : সক্রিয় অনুবর্তন হল এমন শিখন যেখানে কোনো নির্দিষ্ট উদ্দীপক আগে থেকে থাকে না এবং প্রাণী নিজের চাহিদা অনুযায়ী সক্রিয়ভাবে আচরণ করে। এই অনুবর্তনে প্রাণীর স্বতঃস্ফূর্ততা, প্রস্তুতি, শক্তিদায়ক উদ্দীপকের প্রভাব এবং মানসিক সক্রিয়তা বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
5. সক্রিয় বা অপারেন্ট অনুবর্তন কাকে বলে? সংক্ষেপে স্কিনার বক্সের পরীক্ষাটি বর্ণনা করো। [HS-2022, '17, '06, '05, '02]
উত্তর : শিখন শুধুমাত্র উদ্দীপকের উপস্থিতির ওপর নির্ভর করে না। কোনো প্রাণীর স্বতঃস্ফূর্ত ক্রিয়াকলাপও শিখনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এই ধরনের শিখনের ধারণা প্রথম বৈজ্ঞানিকভাবে উপস্থাপন করেন আমেরিকান মনোবিদ বি এফ স্কিনার (B.F. Skinner)।
স্কিনার ১৯৩০ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশিত একটি প্রবন্ধে অপারেন্ট অনুবর্তনের ধারণা উপস্থাপন করেন। “Operant” শব্দের অর্থ হলো 'ফলোৎপাদনের জন্য প্রতিক্রিয়া'।
অপারেন্ট (সক্রিয়) অনুবর্তন : স্কিনারের মতে, কিছু প্রতিক্রিয়ায় উদ্দীপকের উপস্থিতি অপরিহার্য নয়। যে অনুবর্তন প্রক্রিয়ায় প্রাণী স্বতঃস্ফূর্তভাবে আচরণ করে এবং সক্রিয়তা প্রয়োজন, তাকে সক্রিয় বা অপারেন্ট অনুবর্তন বলা হয়। উদাহরণ: চাহিদা, আগ্রহ, আনন্দ বা ব্যথার কারণে প্রাণীর আচরণ। এই প্রক্রিয়ায় প্রাণী নিজ উদ্যোগে শিখন ঘটায়।
স্কিনার বক্স পরীক্ষা :
পরীক্ষার উপকরণ : স্কিনার বক্স, ক্ষুধার্ত ইঁদুর, খাদ্যবস্তু
পরীক্ষার ধাপ :
1. প্রথম পর্যায় : এই ধাপে স্কিনার প্রথমে একটি ক্ষুধার্ত ইঁদুরকে তাঁর তৈরি স্কিনার বক্সের মধ্যে রাখেন। বক্সের ভিতরে একটি ট্রেতে পূর্বে থেকেই খাদ্য রাখা থাকে। ইঁদুর প্রথমে খাদ্য গ্রহণ করে এবং বক্সের পরিবেশের সাথে পরিচিত হয়। এই পর্যায়ে ইঁদুরের কোনো নতুন শিখন বা নতুন আচরণ লক্ষ্য করা যায় না।
উদ্দেশ্য : ইঁদুরকে পরীক্ষামূলক পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নেওয়া, যাতে পরবর্তী ধাপে তার আচরণ সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিকভাবে পর্যবেক্ষণ করা যায়।
সহজভাবে বলতে গেলে, ইঁদুরকে “পরিবেশের সাথে পরিচিত করা”ই হলো এই ধাপের মূল লক্ষ্য।
2. দ্বিতীয় পর্যায় : পরবর্তী দিনে পরীক্ষায় ইঁদুরকে আবার বক্সে রাখা হয়। এবার ট্রেতে খাদ্য আনা হয় লিভারের মাধ্যমে স্কিনারের সাহায্যে। এই পর্যায়ে ইঁদুরের নিজস্ব প্রচেষ্টা প্রয়োজন হয় না। ইঁদুর শুধু লিভারের উপস্থিতি এবং ট্রেতে খাদ্য পৌঁছানোর পদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত হয়।
লক্ষ্য : ইঁদুরকে বুঝানো হয় যে, নির্দিষ্ট ক্রিয়া (লিভারে চাপ দেওয়া) খাদ্য পাওয়ার সাথে সম্পর্কিত।
এই ধাপে ইঁদুর শিখতে থাকে যে বক্সের কোনো যান্ত্রিক কৌশল খাদ্য প্রদানে কার্যকর। সংক্ষেপে, এই ধাপে ইঁদুর শিখছে কোন ক্রিয়া দ্বারা খাদ্য পাওয়া সম্ভব, তবে নিজে কোনো প্রচেষ্টা করছে না।
3. তৃতীয় পর্যায় : পরবর্তী পর্যায়ে ইঁদুর আবার বক্সে রাখা হয়। কিন্তু এবার ট্রেতে খাদ্য রাখা থাকে না। ইঁদুর প্রথমে খাদ্যের দিকে যায়, কিন্তু পায় না। তখন ইঁদুর বিভিন্ন স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিক্রিয়ামূলক আচরণ করে যেমন লিভারে হাত দেয়া, ট্রের দিকে তাকানো, চারপাশ ঘুরে দেখা। এক পর্যায়ে ইঁদুর আচরণ পর্যবেক্ষণযোগ্য হয়ে আসে, লিভারে চাপ দিলে ট্রেতে খাদ্য আসে। এই ধাপটি ইঁদুরের সক্রিয় বা অপারেন্ট আচরণ গঠনের প্রাথমিক পর্যায়। সহজভাবে বলতে গেলে, ইঁদুর ক্রমশ বুঝতে থাকে কোন আচরণটি ফলপ্রসূ।
4. চতুর্থ পর্যায় : পরীক্ষার পুনরাবৃত্তি চলতে থাকে। প্রতিবার লিভারে চাপ দেওয়ার সময় ইঁদুর ধীরে ধীরে কম সময় নেয় এবং দ্রুত ট্রেতে খাদ্য পায়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ইঁদুরের আচরণ স্বয়ংক্রিয় ও দক্ষ হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে, বক্সে ঢুকলেই ইঁদুর লিভারে চাপ দিয়ে ট্রেতে খাদ্য আনতে সক্ষম হয়, কোনো দেরি হয় না। এই পর্যায়ে শিখন সম্পূর্ণ এবং আচরণ অপারেন্ট বা সক্রিয় অনুবর্তিত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। অর্থাৎ, অভ্যাস ও দক্ষতা বৃদ্ধির ধাপে ইঁদুর শিখে যায় কীভাবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে খাদ্য পাওয়া যায়।
সিদ্ধান্ত : স্কিনারের পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা গেছে যে, ইঁদুরের আচরণ মূলত দুই ধরনের হয়- রেসপনডেন্ট এবং অপারেন্ট।
1. রেসপনডেন্ট আচরণ : ইঁদুরের যে প্রতিক্রিয়াগুলি খাদ্যের উপস্থিতিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঘটে, সেই আচরণকে রেসপনডেন্ট বলা হয়। উদাহরণস্বরূপ, খাদ্য দেখলে লালাক্ষরণ বা লিভারে চাপে যাওয়া। এটি ঘটে কারণ ইঁদুর খাদ্য সম্পর্কিত পূর্ব অভিজ্ঞতা বা জ্ঞান রাখে।
2. অপারেন্ট আচরণ : ইঁদুরের যে আচরণ কোনো সরাসরি খাদ্য বা বস্তুধর্মী উদ্দীপকের কারণে ঘটে না, সেই আচরণকে অপারেন্ট বলা হয়। যেমন ইঁদুর কোনো খাবার না দেখে লিভারে চাপ দেয়, যা পরবর্তীতে খাদ্য পাওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত হয়। এটি ঘটে প্রত্যাশা বা আগ্রহের কারণে।
সহজভাবে বলতে গেলে, রেসপনডেন্ট আচরণ স্বাভাবিক উদ্দীপকের কারণে ঘটে, আর অপারেন্ট আচরণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে এবং প্রত্যাশার মাধ্যমে ঘটে।
উপসংহার : স্কিনারের পরীক্ষায় দেখা যায় যে, প্রাণীর স্বতঃস্ফূর্ত ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে শিখন সম্ভব। অপারেন্ট অনুবর্তন আমাদের শেখায় যে শিখন শুধুমাত্র উদ্দীপকের উপস্থিতির ওপর নির্ভরশীল নয়, বরং প্রাণীর স্বতঃস্ফূর্ত ক্রিয়াকলাপ এবং প্রত্যাশা ও আগ্রহের মাধ্যমে কার্যকরভাবে ঘটে।
🔹লেখকের শেষ মন্তব্য : আমাদের প্রকাশিত দ্বাদশ শ্রেণীর চতুর্থ সেমিস্টার শিক্ষাবিজ্ঞান সাজেশন ই-বুকটিতে(PDF) বোর্ডের নতুন সিলেবাস ও নতুন প্রশ্নপত্রের নিয়ম মেনে প্রতিটি অধ্যায় থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর খুব সহজ ও পরিষ্কারভাবে সাজানো হয়েছে। তাই এই ই-বুক(PDF)টি কিনতে হলে মেনু অপশনে ক্লিক করে বিস্তারিত জানুন এবং প্রয়োজনে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
File Details :
PDF Name : দ্বিতীয় অধ্যায় শিখন কৌশল PDF
Size : 1 MB
No. of Pages : 3
Mode : Read-only (Online)
Download Link :
| আরো পড়ুন | প্রশ্নোত্তর |
|---|---|
| 1. ক্লাস 12 শিক্ষাবিজ্ঞান প্রথম অধ্যায় শিখন PDF | Click here |
| 2. শিক্ষাগত প্রযুক্তিবিদ্যা প্রশ্ন উত্তর PDF | Click here |
| 3. ডাকঘর নাটকের প্রশ্ন উত্তর PDF | Click here |
WB Semester Team
📞 & 💬 9883566115
